ইঁদুরের গর্তে মানুষের বাস, ইঁদুর উপজাতিরা আসলে পরিযায়ী শ্রমিক, কোথায় থাকেন তাঁরা
ইঁদুরের বাস চিরকাল মাটির তলার অন্ধকার গর্তে। কিন্তু মানুষও যে কখনও নিজের বাসস্থানের সন্ধানে ইঁদুরের প্রতিবেশি হতে পারে সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হত।

এই পৃথিবীতে গোপনে মাটির নিচে বসবাস করছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। যাঁরা ইঁদুরদের সঙ্গে ইঁদুরদের মত করে মাটির তলার গর্তে বাস করেন বলে তাদের ইঁদুর উপজাতি বলে ডাকা হয়। এঁরা মূলত পরিযায়ী শ্রমিক।
মানুষের এই আশ্চর্য পদ্ধতিতে বসবাসের সূচনা হয় অনেক বছর আগেই। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় চিনের আশঙ্কা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের উপর পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে।
তাই গত শতাব্দীর ৬০ থেকে ৭০-এর দশকে চিনা প্রশাসন বেজিংয়ে মাটির নিচে প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে একটি শহর তৈরি করে। সেখানে জায়গার এতটাই অভাব ছিল যে ৮০টি ঘরের জন্যে একটি করে বাথরুমের ব্যবস্থা করা হত।
পরবর্তীকালে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান হলে পারমাণবিক হামলার ভয় কেটে যায়। তখন থেকে মাটির নিচের ওই অস্বাস্থ্যকর শহরটিতে আর কাউকে থাকতে দেওয়া হয়না। সেটি একটি পরিত্যক্ত জায়গায় পরিণত হয়।
কিন্তু পরে উচ্চশিক্ষার জন্য বা কাজের সন্ধান করতে বহু মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসেন। তাঁরা মূলত চিনের রাজধানী বেজিং-এ এসে থাকার জায়গা খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বা বিশেষ কাজে গ্রাম থেকে আসা মানুষের পক্ষে বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে ঘর নেওয়া সম্ভব ছিলনা।
তখন আবার নতুন করে মাটির তলার পরিত্যক্ত ঘরগুলোর খোঁজ পড়ে। শহরের ব্যয়বহুল বাসস্থানের সামর্থ্য না থাকা মানুষগুলি সেই ঘরগুলোই কম ভাড়ায় নিতে থাকেন। ২০১০ সালের শেষের দিকে চিনা সংবাদমাধ্যম এঁদের ‘দ্যা র্যাট ট্রাইব’ বা ইঁদুর উপজাতি বলে অভিহিত করে।
২০১৫ সালের হিসাবে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজারের মত মানুষকে ভূগর্ভস্থ এই বাসস্থান থেকে সরানো হয়েছে। তবু এখনও কিছু মানুষ সেখানে লুকিয়ে থাকেন। মূলত কিছু পরিযায়ী শ্রমিক এখানে থাকতে বাধ্য হন। গ্রাম থেকে শহরে এসে কম খরচে বাসস্থানের জন্য এই ইঁদুরের গর্তে বাস করার পথ বেছে নেন তাঁরা।