Let’s Go

ডাকাত প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরে দেওয়া হত নরবলি

ভক্তি পরবশ হয়ে বুধো বিশাল উঁচু মা-কালীর এক ভয়াল মৃন্ময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে। বহু ধূমধাম করে তার আরাধ্য দেবীকে সিদ্ধেশ্বরী রূপে পুজো করতে শুরু করে।

Published by
News Desk

বহুকাল আগের কথা। বর্তমান হুগলি জেলার ত্রিবেণীর বাসুদেবপুর গ্রাম ছিল জলাজমি ও জঙ্গলাকীর্ণ এক দুর্গম অঞ্চল। এই অঞ্চল ছিল জলদস্যুদের আস্তানা। এই জঙ্গলেই ছিল বিখ্যাত রঘু ডাকাতের ভাই জলদস্যু বুধোর ডেরা। ডেরার আশেপাশেই ছিল এক কালীমায়ের বিগ্রহ। এই মূর্তি রঘু ডাকাতের কালী নামেই প্রসিদ্ধ ছিল।

মা-কালীর আশীর্বাদ নিয়েই বুধোর দল বেরত ডাকাতি করতে। প্রায় সব ডাকাতিতে বুধোর দল সাফল্য পেত। ঘটনাক্রমে একবার ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে বুধোর দলের কয়েকজন, যদিও বুধো মা-কালীর কৃপায় পালাতে সক্ষম হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক ক্ষোভে বুধো ফেটে পড়ে। সে তার খাঁড়া দিয়ে দেবী অঙ্গে আঘাত হানে। পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে বুধো মূর্তির ক্ষত সারিয়ে দেয়।

লোকশ্রুতি আছে, ভক্তি পরবশ হয়ে বুধো বিশাল উঁচু মা-কালীর এক ভয়াল মৃন্ময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে। বহু ধূমধাম করে তার আরাধ্য দেবীকে সিদ্ধেশ্বরী রূপে পুজো করতে শুরু করে। মাকে তুষ্ট করতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষে সে নরবলির প্রচলন করে।

পরবর্তীকালে বুধোর ডাকাতি জীবনে আসে এক বিরাট পরিবর্তন। সে ডাকাতির প্রায় অধিকাংশ সম্পদ গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দিত। এমনকি গরীব মেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত দিত। কালের নিয়মে এই মাটির মূর্তিটিও ধ্বংস হয়ে যায়।

১৯৯৮ সালে এই মন্দিরে ডাকাতি হয়। ডাকাতরা মায়ের সব অলঙ্কার চুরি করে নিয়ে যায়। যাবার আগে ভেঙে দিয়ে যায় প্রাচীন এই মৃণ্ময়ী কালী মূর্তিটিকেও। বর্তমানে যে মূর্তিটি আছে সেটি স্থাপন করেন চিন্তাহরণ মহারাজ। সিমেন্টের তৈরি মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় সাত ফুট। ভক্তদের সৌজন্যে মন্দিরটির সংস্কারসাধনও ঘটে।

মন্দিরের সেবায়েত সুমন চক্রবর্তী বংশপরম্পরায় এই মন্দিরের পুজো করে আসছেন। নিত্য পুজো হলেও প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় পুজো হয় আড়ম্বর সহকারে। তবে ভক্ত সমাগম বেশি হয় দীপান্বিতা ও মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের কালীপুজোতে।

এখন আর আগের মতো মাঘমাসের পুজোতে নরবলি পড়ে না সত্য, তবে ছাগবলি পড়ে। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে নবরূপে সজ্জিত এই মন্দিরটি এখনও বুধো ডাকাতের কালীবাড়ি হিসেবেই খ্যাত।

Share
Published by
News Desk

Recent Posts