Festive Mood

পুজোয় এখানে মা দুর্গা নন অসুরের স্মরণসভা পালিত হয়, বন্ধ থাকে বাড়ির দরজা, জানালা

আপামর বাঙালি যখন মা দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠেন, তখন কিছু মানুষ মা দুর্গা নন, অসুরের পুজো করেন। অনেকে বাড়ির দরজা, জানালা এসময় বন্ধ রাখেন।

মৌসুমি গুহ মান্না : পুজোর ৪টে দিনের জন্যে মানুষের আগ্রহের কোন শেষ থাকেনা। আট থেকে আশি, সব বয়সের মানুষই নতুন জামা, জুতো পরে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন। পশ্চিমবঙ্গেই এমন কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে দুর্গাপুজোয় অসুর বন্দনা করা হয়।

জঙ্গলমহল এলাকার অসুর সম্প্রদায়ের আদিবাসীদের বিশ্বাস মহিষাসুরের ছলনা করে প্রাণ কেড়েছিলেন আর্য দেবী দুর্গা। এছাড়া ঝাড়খণ্ড, বিহারেও একাংশের আদিবাসী সম্প্রদায় মহিষাসুরকে তাদের পূর্বপুরুষ মনে করে। এরা অসুর নামক আদিবাসী সম্প্রদায় বলে পরিচিত।

মহিষাসুর বধের বিষয়কে একটি পরাজয় নয়, বরং ছলনা করে প্রাণ কাড়ার সঙ্গে তুলনা করে এরা। তাই দুর্গাপুজো তাদের কাছে শোকের সময়। এই সম্প্রদায়ের মানুষজন মহিষাসুরকে ‘হুদুড়’ বলে সম্বোধন করেন। এই শব্দের অর্থ ঝড়, বিদ্যুৎ বা বজ্রের ধ্বনি।

অসুর জনগোষ্ঠীর আদিবাসীরা বলেন তাঁদের সম্রাট মহিষাসুর সবসময় নারীদের সম্মান করতেন। তাই নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলতেন না। এটা জেনেই এক নারীকে দিয়ে অসুরবধ করানো হয়।

এই শোকেই পুজোর ৪ দিন তাঁরা অসুরের পুজো করেন। অসুরের স্মৃতিতে স্মরণসভা করেন। প্রথা অনুযায়ী দাসাই নৃত্য পরিবেশন করেন তাঁরা। এই নাচে পুরুষরা নারী যোদ্ধার ছদ্মবেশে গান গেয়ে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়ান। এই গানে থাকে কান্নার সুর।

অসুর জনগোষ্ঠীর মানুষরা দুর্গাপুজোর মন্ত্র বা ঢাকের শব্দ শোনাকে অশুভ মনে করেন। তাই ওই সময় সকলে ঘরের দরজা, জানলা বন্ধ করে বসে থাকেন।

তবে সময়ের সঙ্গে এখন কিছুটা বদলেছে এই ধারনা ও রীতি। ভাবনাতেও এসেছে বদল। বর্তমান প্রজন্মের অসুর সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা তাঁদের প্রাচীন প্রথার অসম্মান না করেই এখন দুর্গাপুজোর আনন্দে শামিল হচ্ছেন।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *