ইয়েতি কাঁকড়া, ছবি - সৌজন্যে - উইকিমিডিয়া কমনস
গভীর সমুদ্রের অন্ধকারে, আগ্নেয়গিরির ধোঁয়ার কাছে এক বিচিত্র প্রাণি বাস করে। এদের পুরো শরীর এবং পা সবকিছুই ঘন সাদা লোমে ঢাকা থাকে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে যেন সমুদ্রের বরফ রাজ্যে এ এক তুষার যোদ্ধা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এই লোম শুধু শীতের জন্যে নয় বরং এক বিশেষ কারণে সারাবছরই তাদের গায়ে এই তুষারশুভ্র লোম দেখা যায়।
এরা হল সমুদ্রের গভীরে বসবাসকারী এক বিশেষ প্রজাতির কাঁকড়া। জলের প্রায় ২ হাজার ২০০ মিটার গভীরে যেখানে আলো পৌঁছয় না সেই নিকষকালো অন্ধকারে এরা বাস করে। খুব কম তাপমাত্রায়, এমনকি হাড় কাঁপানো ঠান্ডাতেও এরা বেঁচে থাকার অবিশ্বাস্য কৌশল জানে।
এই বিশেষ প্রজাতির কাঁকড়ার নাম কিওয়া হিরসুতা। এদেরকে মূলত দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে দেখতে পাওয়া যায়। লম্বায় মোটামুটি পনেরো সেন্টিমিটার হয় এরা। এদের সারা গায়ে যে ঘন সাদা লোম থাকে তা রেশমের মত নরম ও চকচকে।
ওই তুষারশুভ্র লোমে একধরনের ব্যাকটেরিয়া বাস করে। ওই ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যেই এরা নিজেদের খাবার তৈরি করে। সহজ করে বললে ওই সাদা লোমই হল এদের রান্নাঘর।
এদের চোখ এতটাই ক্ষুদ্র হয় যে দেখলে অন্ধ মনে হবে। গলদা চিংড়ির সাথে গঠনগত মিল থাকায় কখনও কখনও এদের লোমশ চিংড়িও বলা হয়। সমুদ্রের গভীরে জলের প্রবল চাপের মধ্যেই এরা দিব্যি থাকে। সেখানেই তারা ডিম পাড়ে ও বংশবিস্তার করে।
২০০৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টারে বে অ্যাকোয়ারিয়াম রিসার্চ ইন্সটিটিউটের রবার্ট ভ্রিজেনহয়েক নামে এক বিজ্ঞানী এই বিশেষ প্রজাতির কাঁকড়ার সন্ধান দেন। হিমালয়ের তুষার মানব ইয়েতির সঙ্গে তুলনা করে পশমের মত লোমে ভরা এই কাঁকড়াদের নাম ইয়েতি কাঁকড়া বা ইয়েতি ক্র্যাব রেখেছেন বিজ্ঞানীরা।