State

১৫ বছর পর হাওড়ায় ছেলেকে ফিরে পেলেন মা, হ্যাম রেডিও মিলিয়ে দিল মা ও ছেলেকে

অনেক সময় বাস্তব সিনেমা বা গল্পের চেয়েও অনেক বেশি নাটকীয় হয়। এ কাহিনি একদম সেটাই। বাংলার হ্যাম রেডিও মিলিয়ে দিল মা ও হারানো ছেলেকে।

Published by
News Desk

স্বামী ও ২ সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল এক মহিলার। বড় ছেলে একটু মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। একদিন তিনি কোথাও হারিয়ে যান। তাঁর খোঁজ মেলেনি। সে ২০ বছর আগের কথা।

এরপর মহিলার স্বামী একদিন মাঠে কাজ করার সময় বজ্রাঘাতের শিকার হন। তাঁর প্রাণ যাওয়ার পর মহিলার সবটুকু সহায় সম্বল হয় ছোট ছেলে সাগর।

স্বামী নেই। মহিলা নিজেই তাই মাঠে কাজ করা শুরু করেন। কাজের সময় মাঠে ছোট ছেলেকে নিয়ে যেতেন। নিয়েও আসতেন। এভাবে একদিন কাজ করে ফেরার সময় হঠাৎ হারিয়ে যায় সাগরও। সে ১৫ বছর আগের কথা।

সর্বস্ব হারান মহিলা। অনেক খোঁজ করেও সাগরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গ্রামবাসী এমন এক অসহায় মহিলার পাশে দাঁড়ানোর বদলে বরং তাঁকে জানায় সাগরেরও প্রাণ গেছে। আর তার অতৃপ্ত আত্মা গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

গ্রামবাসীদের গঞ্জনা ও চাপের মুখে অবশেষে মহিলাকে গয়ায় গিয়ে তাঁর স্বামী ও ছোট ছেলে সাগরের পিণ্ডদান করে আসতে হয়। এবার আসা যাক ২০১৯ সালে।

হাওড়ার ধূলাগড়ে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হন এক তরুণ। তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসার পর আঘাত সারলেও তরুণের মস্তিষ্ক থেকে তাঁর পুরনো সব স্মৃতি মুছে যায়।

চিকিৎসকেরা জানান ওই তরুণের সব কথা মনে পড়তে পারে তখনই যদি তাঁকে তাঁর পুরনো কথা বলা যায়। চেনা কেউ সামনে আসেন। কিন্তু তিনি যে কোথাকার বাসিন্দা তাই তো অজানা।

গত ৬ বছর ধরে ওই তরুণ স্মৃতি হারিয়ে ওই হাসপাতালেই ছিলেন। এদিকে তরুণ কোথাকার বাসিন্দা তা জানতে এগিয়ে আসে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব। যারা যুক্ত অ্যামেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও চালনার সঙ্গে।

হ্যাম রেডিওর অন্য রাজ্যের বন্ধুদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে ওই তরুণের খোঁজ শুরু করে। আর এভাবেই তাদেরই হ্যাম রেডিও বন্ধুর সাহায্যে অবশেষে তারা জানতে পারে ওই তরুণের ঠিকানা।

বিহারের ভাগলপুরের দেউরি মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই তরুণের হতভাগ্য মা ঝাঝি দেবী যখন শোনেন তাঁর ছোট ছেলে সাগর বেঁচে আছেন, হাওড়ায় এক হাসপাতালে রয়েছেন, তখন তিনি আনন্দ আর ধরে রাখতে পারেননি।

এদিকে ওই তরুণের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে তাঁর মায়ের ভিডিও কলে কথা বলানো হয়। মাকে দেখে কিন্তু চিনতে এতটুকু দেরি করেননি সাগর। মাকে দেখামাত্র তিনি কেঁদে ফেলেন।

এদিকে ওই গ্রামের প্রধান ঝাঝি দেবীকে ভাগলপুর থেকে হাওড়ায় পাঠানোর সব বন্দোবস্ত করে দেন। আর সেভাবেই ১৫ বছর পর মায়ের সঙ্গে দেখা হল হারানো ছেলের। তবে এখনও একটা বিষয় জানা যায়নি।

মাঠ থেকে ফেরার সময় সাগর কীভাবে হারিয়ে গেলেন এবং তিনি কীভাবে ৬০০ কিলোমিটার দূরে ধূলাগড়ে অমন অবস্থায় পৌঁছলেন। যেটা জানা গেলে মাঝের সময়টায় সাগরের সঙ্গে কি হয়েছিল সেটাও সকলে জানতে পারবেন। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা

Share
Published by
News Desk

Recent Posts