কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্মিত চিত্রে গ্রীষ্মকাল, প্রতীকী ছবি
গরম বাড়ছে। সূর্যের তাপে নাজেহাল দশা। ঘামে ভিজে যাচ্ছে সারা শরীর। বহু মানুষ আছেন যাঁরা দূরান্ত থেকে অফিসে যাতায়াত করেন। আবার অনেকেই কাজের প্রয়োজনে প্রায় সারাদিন রাস্তায় কাটাতে হয়। এদেরই একাংশ ফি বছর সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
সবে বৈশাখ। ফলে গরম আগামী দিনে আরও বাড়বে। এ বছর আবার রেকর্ড ভাঙা গরমের আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছে মৌসম ভবন। ফলে এবছরও কিছু মানুষ রাস্তাঘাটে সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সানস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু নতুন কিছু নয়। পুনরায় যেন মৃত্যুর মত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা না ঘটে সে কারণে ডাক্তারবাবুরা আগেভাগেই সানস্ট্রোক নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন। গরমকালে ডায়রিয়া, হজমের গোলমালের মতো একটি নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা হল সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার মতো ঘটনা।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শতরূপা চট্টোপাধ্যায় বিশেষ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। পরামর্শগুলি মেনে চললে সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাটুকু এড়ানো যেতে পারে। তিনি জানালেন, অনেকেই গরমের দাপট সহ্য করতে না পেরে বাসট্রামে অথবা রাস্তায় হাঁটাচলা করাকালীন অজ্ঞান হয়ে যান। কয়েকটি বিষয়ে আগেভাগে সতর্ক থাকলে সান স্ট্রোক এড়ানো যেতে পারে। যেমন, খাওয়া-দাওয়া। তেলমশলা জাতীয় খাবার গরমে যতটা সম্ভব এড়ানো যায় ততই মঙ্গল। বেশি পরিমাণে সবজি খেতে পারেন। তাছাড়া, জলের অভাব পূরণ করবে এমন ফল খাওয়াটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। তরমুজ, শসা কিংবা আঙুর বেশি পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করলে ভালো।
সান স্ট্রোক কিশোর বয়সে সাধারণত হয় না। এতে আক্রান্ত হন পরিণত বয়স্করা। সান স্ট্রোকের আগে শরীর ভীষণ গরম হয়ে যায়। মুখটা লালচে হয়ে যায়। সেইসঙ্গে ঠোঁট শুকিয়ে যেতে থাকে। হাত-পা থরথর করে কাঁপে। মাথায় শুরু হয় অসহ্য যন্ত্রণা। অনেক সময়ে অজ্ঞানও হয়ে যান আক্রান্তরা। রাস্তায় মাথা ঘুরে পড়ে যান অনেকে। রোগী জ্ঞান হারালে হাসপাতালে ভর্তি করাটাই উচিত। না হলে বিপদ বাড়তে পাড়ে। যদি সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পরে রোগীর জ্ঞান থাকে, তাহলে তাঁকে যতটা সম্ভব জল খাওয়ানো উচিত। তাতে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করবেন।
এছাড়া, সান স্ট্রোকের আগে অনেক সময়ে ত্বক শুকনো হয়ে যায়। ক্রমশ মুখ লাল হতে শুরু করে। সেইসঙ্গে ঘনঘন প্রস্রাবও হয়। চোখে অন্ধকার দেখেন আক্রান্ত। সানস্ট্রোকে শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়। হাঁটা চলা বা দাঁড়ানোর মত ক্ষমতাও নেই বলে মনে হয় রোগীর। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতে থাকে। চোখ জড়িয়ে আসে। যেন প্রবল ঘুম পেয়েছে। সেইসঙ্গে একটা শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। ভাল করে নিঃশ্বাস নিতেও অনেক সময়ে রোগীদের কষ্ট হয়। এছাড়া মাথা শুধু যন্ত্রণা করাই নয়, ঘুরতেও থাকে। অন্যান্য লক্ষ্মণগুলির ভিতর রয়েছে কিছু ক্ষেত্রে রোগীর গা-হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা। সেইসঙ্গে মাথা-গলা-ঘাড়ে দারুণ ব্যথা হতে থাকে। রোগী ক্রমশ বাহ্যজ্ঞান শূন্য হতে থাকেন।
সান স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু খানিক সতর্কতা অবলম্বন করলেই এড়ানো যেতে পারে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলেন শতরূপা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, গ্রীষ্মের রোদ্দুর যতটা গায়ে না মাখা যায় ততই ভালো। সরাসরি রোদ না লাগতে দেওয়া সবচেয়ে ভাল। রাস্তায় বার হলে ছাতা অবশ্যই সঙ্গে রাখা উচিত। সুতির জামাকাপড় পরা আবশ্যিক। পোশাকের রং হাল্কা হলেই ভাল। বাড়ি থেকে বার হলে সঙ্গে জল রাখা উচিত। রাস্তায় কাজ করার ফাঁকে ঘনঘন জল খাওয়াটা স্বাস্থ্যসম্মত। খুব বেশি গরম অনুভব করলে জলে ভেজানো রুমাল মাথা-কান-ঘাড়ে বুলিয়ে নিলে ভাল। লু বইলে রুমাল দিয়ে নাক ঢাকা রাখা জরুরি। একটানা রোদে থাকা এড়িয়ে চলতে হবে। কিছুক্ষণ রোদে কাটালে তারপর বেশ কিছুক্ষণ ছাওয়ায় বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। সঙ্গে জল পান করে যেতে হবে।
শিশু বা কিশোর বয়সে সাধারণত সান স্ট্রোক হয় না। তবে গরমে অনেক সময়েই বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাচ্চাদের অতিরিক্ত গরমে জ্বর এসে যায়। বাচ্চারা অজ্ঞান হয়েও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশুদের সুতির জামাকাপড় পরানোটাই মঙ্গল। অনেক সময়ে অভিভাবকেরা বাচ্চাদের গরমের সময়ে স্যান্ডো গেঞ্জি পরিয়ে রাখেন। অভিভাবকদের ধারণা, তাতে বাচ্চারা সুস্থ বোধ করবে। কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি নেই। বরং, গরমকালে খালি গায়ে থাকার চেয়ে সুতির কাপড়ে গা ঢেকে রাখাটা স্বাস্থ্যসম্মত বলে জানালেন চিকিৎসক শতরূপা চট্টোপাধ্যায়। শিশুদেরও ফলের রস আর জল বেশি পরিমাণে খাইয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। আর সবশেষে অসুস্থ হলে বা সানস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি।