Let’s Go

গন্ধমাদনের ঢালে হরিশঙ্কর, জংলি ফুলের মিষ্টি মৌতাতে ভরে ওঠে মন

শান্ত সুন্দর আরণ্যক পরিবেশ। গন্ধমাদন দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। শাল, পিয়াল, মহুয়ার বন। নিত্য অন্নভোগের ব্যবস্থা আছে।

Published by
Sibsankar Bharati

সেই আঠেরো থেকেই আমার ভ্রমণ ও সাধুসঙ্গের জীবন শুরু। আজও তা জারি আছে। তপোবন ভারতের প্রায় সব তীর্থেই গিয়েছি। আর্থিক দৈন্যের দিনেরও ভ্রমণ চলেছে অপ্রতিহত গতিতে। একই তীর্থে একাবার নয় একাধিকবার-বারবার। একবার হরিদ্বারে যাওয়ার কথা যখন একবারও ভাবতে পারতাম না, এখন রসিকতা করে বলতে হয় হরিদ্বারে আমার থেকে বেশি গিয়েছেন একমাত্র ট্রেনের ড্রাইভার।

সারাজীবনে পাঁচ হাজার পথচলতি রমতা সাধুর সঙ্গ করেছি। তাঁদের অনেকের মুখে শুনেছি নানা তীর্থের বিবরণ, মাহাত্ম্য কথা, পুরাণের কথা। শুনে অভিভূত হয়েছি। সাধু সন্ন্যাসীদের বলা যেসব তীর্থের কথা এখানে লিখেছি সেখানে অনেকে যায় না। অনেকে জানেই না। যারা জানে তাদেরও অনেকের যাওয়ায় অরুচি। এখানে এক তীর্থের কথা বলা হল, যাতে এই তীর্থস্থানগুলির প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ে, রুচি আসে।

মোটরে চললাম গন্ধমাদনের দক্ষিণ ঢালে হরিশঙ্করের উদ্দেশে। পাইকমল হয়ে সোজা এল পদমপুর। মোটর চলল ডানহাতের পথ ধরে। কিছুটা চলার পরই শুরু হল সেই শাল, পিয়াল, মহুয়া আর পর্ণমোচীর বন। জংলি ফুলের মিষ্টি মৌতাতে ভরে ওঠে মন।

মোটর চলছে তো চলছেই। পথ যেন আর শেষই হয় না। নৃসিংহনাথ থেকে খাড়িয়ার রোড ধরে খাপড়াখোল এলাম ৭০ কিমি। ডানদিকের রাস্তা চলে গিয়াছে হরিশঙ্কর, বাঁদিকের রাস্তা বোলাঙ্গিরের। এই মোড় থেকে হরিশঙ্করের দূরত্ব ১০ কিমি। দেখতে দেখতে মোটর এসে দাঁড়াল হরিশঙ্কর মন্দিরপ্রাঙ্গণে। সারা পথের চারদিকে শান্ত-সুন্দর আরণ্যক পরিবেশ। গন্ধমাদন দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। এরই দক্ষিণ ঢালে হরিশঙ্কর মন্দির। সংখ্যায় করগোনা যাত্রী, তাই কোলাহল নেই।

গন্ধমাদন পর্বতে হরিশঙ্কর মন্দির

প্রধান ফটক পেরলাম। একটু এগতেই কয়েক ধাপ সিঁড়ি। এলাম মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বারে। এর বাঁ পাশে ভোগ রান্নাঘর। বিস্তৃত মন্দিরপ্রাঙ্গণ গাছে ভরা। হরিশঙ্কর মন্দিরটি দুটি ভাগে বিভক্ত। ভিতরে প্রথম অংশেই শিবের বাহন বৃষমূর্তি। পাশ কাটিয়ে এগতেই গর্ভগৃহ। এর ফটকটি বেশ ছোট। মোহাচ্ছন্ন আলো-আঁধারি পরিবেশ।

অনাড়ম্বর মন্দির কিন্তু পাহাড়ি ঢালে এর আকর্ষণই আলাদা। বেদিতে রূপোর আসনে প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহটি বাঁশি হাতে শ্রীকৃষ্ণ তথা ভগবান শ্রীহরি। কষ্টিপাথরে নির্মিত। উচ্চতায় ফুট দেড়েক হবে। মনোহর বিগ্রহ। ঠিক বেদির সামনেই একটি গর্ত। তারই ভিতরে পিঙ্গলবর্ণের শিবলিঙ্গ তথা ভগবান শঙ্কর। পিতলের ফণাধর সাপ দিয়ে বেড় দেওয়া। একই মন্দিরে, একই সঙ্গে পূজিত হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ এবং শঙ্কর। তাই নাম হয়েছে এর হরিশঙ্কর।

হরিশঙ্করের পূজারি ব্রাহ্মণ নন। বংশানুক্রমে উপজাতির মানুষই নিত্যপুজো করেন বিগ্রহদ্বয়। এখানে নিত্য অন্নভোগের ব্যবস্থা আছে। সামান্য প্রণামী দিলে যাত্রীরা দুপুরের প্রসাদও পেতে পারেন পরিতৃপ্তির সঙ্গে।

কথিত আছে, দুলভা নামে স্থানীয় এক রানি বহুকাল আগে হরিশঙ্করের মন্দির নির্মাণ এবং শিবলিঙ্গ স্থাপন করেন স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে এই ধ্যানগম্ভীর পাহাড়ি পরিবেশে গন্ধমাদনের চরণতলে।

Share
Published by
Sibsankar Bharati

Recent Posts