Mythology

সপ্তমীর দিন নবদুর্গার কোন রূপের পুজো করলে সমস্ত ভয় ও শত্রুনাশ হয়

দেবী সদা সর্বদা সকলকে শুভ ও মঙ্গলজনক ফল দান করে থাকেন। দেবীর উপাসনা করলে শত্রুনাশ হয়।

Published by
Sibsankar Bharati

রামচন্দ্র দুর্গাপুজোর পক্ষে অকাল বলেছিলেন শরৎকালকে, কেন? শরৎকাল, সূর্যের দক্ষিণায়ন। সমস্ত দেবদেবীর নিদ্রার সময়। অনন্যোপায় ভগবান ব্রহ্মা দেবী দুর্গাকে জাগরিত করলেন স্তবস্তুতি করে। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বিল্বমূলে দুর্গার বোধন করতে। দেবীর আদেশ যথানিয়মে পালন করলেন পিতামহ ব্রহ্মা।

মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত নয়রাত্রি ব্যাপী দেবী দুর্গার নয়টি রূপ ও শক্তির যে আরাধনা করা হয় সেটিই নবরাত্রি ব্রত।

দেবী দুর্গার নয়টি রূপের নামকরণ করেছিলেন পিতামহ ব্রহ্মা। নয়টি নামের নয়টি বৈচিত্র্যময় রূপভেদ ও শক্তি। এঁরা প্রত্যেকেই দেবী দুর্গার নয়টি কায়াব্যূহ মূর্তি। এই নয়টি নামের উল্লেখ আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে।

কালরাত্রি

নবরাত্রি পুজোর সপ্তম দিনে পূজিতা দেবী কালরাত্রি – ছবি – সৌজন্যে – গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর

দেবী দুর্গার সপ্তম রূপের নাম কালরাত্রি। দেবী সর্বমারক, কালেরও নাশিকা। কারণ মহাপ্রলয়ে কালেরও বিনাশ হয়। নবরাত্রি ব্রতের সপ্তম দিনে পুজো ও আরাধনা করা হয় দেবী দুর্গার সপ্তম শক্তি দেবী কালরাত্রির।

এই রূপে দেবীর গায়ের রং গাঢ় অন্ধকারের মতো কালো। মাথার চুল অগোছালো এলোমেলো। গলায় পরা মালাটি বিদ্যুতের চমকের মতো তীব্র উজ্জ্বল। দেবী ত্রিনয়নী। প্রতিটি নয়নই ব্রহ্মাণ্ডের মতো গোল। সর্বদা বিদ্যুতের দ্যুতি নিঃসৃত হচ্ছে তার থেকে।

চতুর্ভুজা দেবীর চারটি হাতের মধ্যে ডানদিকের নিচের হাতটি বরদানরত, বরমুদ্রায়। ডানদিকের উপরের হাতটি অভয় মুদ্রায়। বামের উপরের হাতে ধরা লোহার কাঁটা। খড়্গ ধরে আছে বামের নিচের হাতে।

দেবী কালরাত্রি ভয়ঙ্কররূপী হলেও তিনি সদা সর্বদা সকলকে শুভ ও মঙ্গলজনক ফল দান করে থাকেন। দেবী কালরাত্রির উপাসনা করলে শত্রুনাশ হয়। এই দেবীর স্মরণ করামাত্র ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পালিয়ে যায় ভূতপ্রেত – দৈত্যদানব অশরীরী যারা – তারা সকলেই। যতদিন সাধক বা উপাসক বেঁচে থাকেন ততদিন পর্যন্ত দেবী কালরাত্রির করুণায় শত্রুভয়, রাজভয়, অগ্নিভয়, জন্তুভয়, জলভয়, রাত্রিভয় – এসব কিছুই থাকে না।

শাস্ত্রীয় নিয়মে দেবী কালরাত্রির পুজোর বিধান দেওয়া হয়েছে দুর্গাপুজোর সপ্তম দিনে। এই দিন উপাসকের মন অবস্থান করে সহস্রার চক্রে। জাগতিক ও পারমার্থিক সমস্ত সিদ্ধির দ্বার উন্মোচিত ও অবারিত হয়ে যায় তাঁর কাছে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ‘নবদুর্গা’ অনুবাদিকা গায়ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর। ছবি এঁকেছেন পরমেশ এবং বি.কে. মিত্র। এদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম ক্ষমা প্রার্থী হয়ে। সহায়ক গ্রন্থ শ্রীশ্রীচণ্ডী। এছাড়াও শাস্ত্রীয় শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় জ্ঞানদাপ্রসাদ চৌধুরী। কৃতজ্ঞতা ভাষা বা লেখায় প্রকাশ করা যায় না। এ অন্তরের এক আনন্দময় অনুভূতি যে। – শিবশংকর ভারতী, ছবি – সৌজন্যে – গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর

Share
Published by
Sibsankar Bharati