National

তুষারপাত কাজে লাগিয়ে চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য রুখতে হিমালয়ের জঙ্গলে অভিনব পদক্ষেপ

হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে তুষারপাতের ফলে তৈরি হওয়া প্রতিকূলতাকে নিজেদের প্রয়োজনে কাজে লাগায় চোরাশিকারিরা। গহন জঙ্গলে প্রবল ঠান্ডাতেও তাদের নজরে রাখতে বিশেষ রাস্তায় হাঁটলেন বনকর্মীরা।

বরফের সাদা চাদরে ঢেকে গেছে চারদিক। যেদিকে চোখ যায় শুধুই সাদা রঙের প্রাবল্য। আপাতদৃষ্টিতে যা দেখতে সুন্দর লাগলেও প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার জন্য খুবই কষ্টকর। কারণ পানীয় জল থেকে শুরু করে রোজকার গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জলের সবটুকুই জমে বরফ হয়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিকেই কাজে লাগিয়ে বাড়ে চোরাশিকারিদের উপদ্রব। প্রবল ঠান্ডা, তুষারপাতকে কাজে লাগায় তারা। এই প্রতিকূল পরিবেশে তাদের ওপর নজরদারির সুযোগ কম বলে তারা এইসময় বন্যপ্রাণিদের শেষ করতে থাকে।

তবে এবার আর গঙ্গোত্রী ন্যাশনাল পার্কে সে উপায় নেই। গোমুখ থেকে বেশ কিছুটা নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত এই জাতীয় উদ্যান ২ হাজার ৩৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। এখানে রয়েছে অনেক ধরনের প্রাণি। যাদের শিকার করতে লুকিয়ে হাজির হয় চোরাশিকারির দল।

তবে এবার ১৩ হাজার ফুট উচ্চতাতেও গহন পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে নানা জায়গায় ট্র্যাপ ক্যামেরা বসিয়ে এসেছেন বনকর্মীরা। এ কাজ সহজ ছিলনা। তবে জঙ্গলের জীব বৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে তাঁদের এই কাজ আখেরে চোরাশিকারিদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই সাহায্য করছে। কারণ ওই ক্যামেরার ছবি বলে দেবে জঙ্গলে চোরাশিকারিদের আনাগোনা হচ্ছে কিনা। সেই সঙ্গে বন্যপ্রাণিদের দিকেও নজর রাখা সহজ হবে।

বিগত কয়েকদিনে গঙ্গোত্রী জাতীয় উদ্যানে ঠান্ডার প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে উপরদিকের অংশের জল জমে বরফে পরিণত হয়েছে। গঙ্গোত্রী ধামেও মোটা বরফের আস্তরণ পড়েছে।

প্রচুর তুষারপাতের কারণে গ্রামবাসী এবং উদ্যানের কর্মীরা জল সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা এবং বনকর্মীরা জমে যাওয়া জলকে গরম করে পানীয় জলের চাহিদা মেটাচ্ছেন এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম সারছেন।

উপরের দিকে প্রবল তুষারপাতের প্রভাবে নিচের এলাকাগুলিতেও তাপমাত্রা নেমে গেছে। এই প্রাকৃতিক পরিবেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা চোরাশিকারিদের ধরতে পারা। তবে চ্যালেঞ্জের সঙ্গে কর্মীরা উঁচু জায়গাগুলিতে সফলভাবে ক্যামেরা লাগিয়ে চোরাশিকারিদের ধরার ফাঁদ পেতে রেখেছেন।

ক্যামেরার মাধ্যমে চোরাশিকারিদের গতিবিধি এবং উদ্যানে বন্যপ্রাণিদের সংখ্যা, ২টোই সহজে নির্ধারণ করা যাবে। গঙ্গোত্রী জাতীয় উদ্যানের কর্মীদের নিয়মিত পাহারাদারি এবং তত্ত্বাবধানের ফলে বন্যপ্রাণিদের সুরক্ষা এবং সংরক্ষণের দিকটি ভালোভাবে বজায় রয়েছে।

গঙ্গোত্রী ধামের তাপমাত্রা একটানা শূন্যের নিচেই রয়েছে। বন দফতরের মতে আবহাওয়ার এই চরম অবস্থার মধ্যেও বনকর্মীদের এই একনিষ্ঠ পাহারাদারির জন্য জীব বৈচিত্র্যের সুরক্ষা সুনিশ্চিত হওয়ার সাথে দুর্লভ প্রজাতিগুলিও সংরক্ষিত হবে। তাছাড়া উদ্যানে কোনও অনধিকার প্রবেশের ঘটনা ঘটলে তাও নজরে আসবে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *