তাঁর বন্ধুর শেষ নেই, তবে কেউ মানুষ নয়, দেশের পক্ষীমানবের এ এক অদ্ভুত প্রেমকাহিনি
তাঁর লাগেনা কোনও অন্তর্জাল। তিনি কোনও সমাজ মাধ্যমেও নেই। তবু হাওয়ায় ভেসে নিমেষে মানুষের কাছে পৌঁছে যায় তাঁর অন্য প্রেমের কাহিনি।

এক সাধারণ কৃষকের ঘরের সন্তান পান্নালাল মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন পাখির ডাক নকল করতে পারতেন। কয়েক দশক পর তাঁর কাছে পাখির প্রতিটা ডাক, তাদের ডানা ঝাপটানো এবং গানই হয়ে উঠল একেকটি গল্প।
ঝাড়খণ্ডের রামগড় জেলার সরাইয়া কুন্দরু গ্রামে জন্ম পক্ষীমানব পান্নালাল মাহতর। কৃষিকাজই তাঁর প্রাথমিক পেশা। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই পাখিদের নিয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন বুঝে যান ওদের কষ্ট, আনন্দ, ভয়ের ভাষা।
শুধুমাত্র ডাক শুনেই তিনি ১০০-এর উপর পাখিকে সনাক্ত করতে পারেন। ৪৫টিরও বেশি প্রজাতির পাখির সঙ্গে তিনি অবলীলায় কথা বলেন। শুধুমাত্র চোখের দিকে তাকিয়েই পান্নালাল পাখিদের মন পড়ে ফেলতে পারেন।
আর তারা যাতে পান্নালালকে নিজেদের একজন বলেই মনে করে তার জন্য তিনি পাখিদের কাছে যাওয়ার আগে সবসময় নিজেকে সবুজ আচ্ছাদনে ঢেকে নেন। এভাবেই তিনি আস্তে আস্তে পাখিদের জগতের অংশ হয়ে উঠেছেন।
এক অদ্ভুত ক্ষমতায় পান্নালাল পাখিদের কিচিরমিচির শুনে এবং ডানা ঝাপটানো দেখেই তাদের মনের অবস্থা বুঝে যান। ডানা ঝাপটে তারা আনন্দ প্রকাশ করে। আবার হঠাৎ শান্ত হয়ে যাওয়ার অর্থ কোনও বিপদসংকেত বয়ে আনা। পান্নালাল পাখিদের শুধুই দেখেন না, তাদের কথা শোনেন, অনুভব করেন এবং বোঝেন।
আশপাশে যখন চড়াইদের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল তখন পান্নালাল তাদের থাকার জন্য গোটা গ্রাম জুড়ে ৫০০টিরও বেশি কৃত্রিম বাসা তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে সরাইয়া কুন্দরু গ্রাম চড়াইদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। রোজ তিনি কাজের পর এই বাসাগুলির দেখাশোনা করেন। তারপর বনের পাখিদের সাথে গল্প করতে যান।
পান্নালাল সেই পক্ষীবিশারদ যিনি নিয়মিত পাখিদের শরীরের খোঁজখবর রাখেন। আহত পাখিদের তিনি যত্নসহকারে সেবা করেন, খাওয়ান, সারিয়ে তোলেন এবং শেষে মুক্ত করে পাঠিয়ে দেন তাদের নিজস্ব আশ্রয়ে।
কৃষিকাজ থেকে যে সামান্য আয় হয় তা দিয়েই পান্নালাল পাখিদের জন্য এই আবাসস্থল গড়ে তুলেছেন। তাঁর কাহিনি স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছেও পৌঁছেছে। তিনি বাচ্চাদের সামনে একডাকে ময়ূর, কাক অথবা কোকিলকে ডেকে এনে তাদের অবাক করে দিয়েছেন।
পান্নালাল শিখিয়েছেন কি করে তাদের বন্ধু হতে হয়। পান্নালাল তাঁর কাজের জন্য পেয়েছেন নানা পুরস্কারও। কিন্তু তিনি মনে করেন কোনও পাখি যখন তাঁর ডাকে উড়ে এসে তাঁর হাতের ওপর বসে, তার চেয়ে সেরা পুরস্কার আর কিছুই হয়না।