Festive Mood

মকরসংক্রান্তিতে কী করলে স্বয়ং ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে যায় মনের কথা

কেন মকরসংক্রান্তির প্রাকলগ্ন থেকে নীল আকাশের বুকে মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে ঘুড়ি ওড়ানোর ধুম?

Published by
Mallika Mondal

ভো কাট্টা। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বাড়ির ছাদ বা মাঠের সামনে দাঁড়ালে শোনা যায় কচিকাঁচা, তরুণ-তরুণীদের কর্ণবিদারক উল্লাস। আকাশে ঘূর্ণায়মান রংবেরঙের ঘুড়ির কার কত দম তা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লাগে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা ঘুড়িপ্রেমীরা। শরতের আকাশে জমিয়ে উড়তে থাকা ঘুড়ি হয়ে ওঠে মানুষের অনাবিল আনন্দের আকাশছোঁয়া বার্তা।

তবে শুধু শরতেই নয়, শীতের মরসুমেও কিন্তু ঘুড়ি নিয়ে বহু মানুষের মধ্যে তৈরি হয় উৎসবমুখর উন্মাদনা। লাটাইয়ের সুতোয় টান দেওয়ার উল্লাসে গা গরম করে নেন ৮ থেকে ৮০ সকলেই।

পঞ্জাব, গুজরাট, হিমাচলপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, চণ্ডীগড় এমনকি জম্মুর আকাশ ঢেকে যায় বিশালাকারের রংবাহারি ঘুড়িতে। মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে আয়োজিত সেই ঘুড়ি উৎসবে সামিল হন বাঙালি অবাঙালি সকলেই।

কেন মকরসংক্রান্তির প্রাকলগ্ন থেকে নীল আকাশের বুকে মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে ঘুড়ি ওড়ানোর ধুম? আসলে পৌষ মাসের শেষ দিন থেকেই শুরু সূর্যের উত্তরায়ণের। অর্থাৎ সূর্য এবার পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে তার কৃপাদৃষ্টি সরিয়ে মুখ তুলে তাকানো শুরু করে উত্তরের বাসিন্দাদের দিকে।

সূর্যই হল পৃথিবীর সকল শক্তির আধার। তার আলো ছাড়া পৃথিবী অন্ধকার, নিষ্প্রাণ, জড়বৎ। পৌষের শেষে সূর্যের উত্তর গোলার্ধ অভিযানের মুহুর্তটিকে উদযাপন করতে তাই আকাশে ওড়ানো হয় ঘুড়ি। সেই ঘুড়ি সাধারণ মানুষের আর্তি পৌঁছে দেয় দূর গগনের নক্ষত্রকে। এমনটাই বিশ্বাস করেন ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।

তবে শুধু সূর্যই নন, সূর্যের উত্তরায়ণের সাথে সাথে নাকি ৬ মাস পর খুলে যায় স্বর্গের দ্বার। দীর্ঘ বিশ্রামপর্ব শেষে অন্যান্য দেবতারাও নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তাই তাঁদের কাছেও মনের বাসনা পৌঁছে দিতে ঘুড়ি হয়ে ওঠে মর্ত্যবাসীদের অন্যতম হাতিয়ার।

গুজরাটে মকর উৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর ২ দিনের জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয় ঘুড়ি-সম্রাটদের ঘুড়ির কাটাকুটি খেলার প্রতিযোগিতা।

একই চিত্র দেখা যায় পঞ্জাবেও। সেখানেও মকর উৎসব উপলক্ষে আকাশ জুড়ে ভেসে বেড়াতে দেখা যায় নানা আকারের নানা বাহারের ঘুড়ি। সেই ঘুড়ি উৎসব স্থানীয় ভাষায় পরিচিত ‘লহরী’ নামে। শীতের শেষে অফুরান রবি শস্যে ভরে ওঠে পঞ্জাবের কৃষকদের শস্যভাণ্ডার। চাষিভাইরা ঘরে শস্যের আগমনকে অর্থাগমের নতুন সূচনা বলে মনে করেন। গোলা ভর্তি ধান, ঘরে লক্ষ্মীর বিরাজ, আর কি চাই?

সেই আনন্দঘন মুহুর্তকে উদযাপন করতেই ঈশ্বরের কাছে ধন্যবাদ জানিয়ে পাঠানো হয় ঘুড়ি। কৃষকদের ধন্যবাদ বয়ে আকাশের দিকে উড়ে যায় বাহারি ঘুড়ি। এখন সেই প্রথা গ্রামের সীমানা ছাড়িয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে শহরেও।

শুধু ভারতেই নয়, প্রতিবেশি বাংলাদেশেও পৌষের শেষে পালিত হয় ঘুড়ি উৎসব। সেই উৎসব যদিও আজকের নয়। মুঘল আমল থেকেই মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে আকাশে ওড়ানো হয়ে থাকে ঘুড়ি। বাংলাদেশে এই উৎসব ‘সাকরাইন’ উৎসব নামে প্রচলিত।

ইতিহাস বলে, ঢাকার নবাব শীতকালীন খাজনা আদায়ের পর সপার্ষদ আকাশে ঘুড়ি ওড়াতেন। কালক্রমে সেই উৎসব পরিণত হয় সাধারণের উৎসবে। তাহলে আর দেরি কেন? ঘুড়িওয়ালারা গৃহবন্দি লাটাই, মাঞ্জা আর সাধের ঘুড়ি নিয়ে কোমরকষে নেমে পড়ুন ‘ভো কাট্টা’-র ময়দানে।

Share
Published by
Mallika Mondal

Recent Posts