Festive Mood

মকরসংক্রান্তিতে কিভাবে মিলবে মোক্ষলাভ, পুণ্যস্নানে পুরাণ, লোকগাথা, বিশ্বাস

ভক্তিই জীবনের অন্যতম মহতী শক্তি। সেই আপ্তবাক্যকে প্রমাণ করে মকরসংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে লক্ষ লক্ষ ভক্তের গঙ্গাস্নান বা সাগরস্নান।

Published by
News Desk

ভক্তিই জীবনের অন্যতম মহতী শক্তি। সেই আপ্তবাক্যকে প্রমাণ করে মকরসংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে লক্ষ লক্ষ ভক্তের গঙ্গাস্নান বা সাগরস্নান। কাকডাকা ভোরে কনকনে ঠান্ডা জলে ডুব দিতে বছরের নির্দিষ্ট দিনটিতে পিছপা হন না বহু মানুষ। তাঁদের বিশ্বাস, ‘এক ডুবিতে আই-ঢাই। দুই ডুবিতে তারা পাই। তিন ডুবিতে মকরের স্নান। চার ডুবিতে সূর্যের স্নান। পাঁচ ডুবিতে গঙ্গাস্নান।’ মকরসংক্রান্তিতে গঙ্গা বা সাগরে স্নান করলে জীবনের সব পাপ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে মিশে যায় গঙ্গার বুকে। আর তার জন্য দরকার ৫ ডুব।

মকরসংক্রান্তি তিথির প্রথম প্রভাতে সূর্যের আলো যখন এসে মেশে গঙ্গার বুকে, তখনই পুণ্যস্নানের মোক্ষম সময়। রক্তাভ জলের বুকে ৩-৫ ডুব দিলেই মিলবে ‘মোক্ষলাভ’! অর্থাৎ ইহজগতের জীবনচক্রের জটিল ঘূর্ণাবর্ত থেকে চিরকালের জন্য মিলবে মুক্তি। আর কোনওরূপেই লোভ হিংসা ভোগের এই পৃথিবীতে জন্ম হবে না পুণ্যকামী ভক্তের। এটাই বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাসই হাজার হাজার মাইল পথ পার করে ভক্তদের টেনে নিয়ে যায় গঙ্গাসাগরে।

পুরাণের মতে, পৌষের শেষ দিন অর্থাৎ সূর্যের উত্তরায়ণের সূচনার ব্রহ্মমুহুর্তে যমুনায় মকর স্নান করলে আয়ু বৃদ্ধি হয়। তাই মা যশোদা সেই বিশ্বাসে বালক কৃষ্ণকে নিয়ে যমুনায় যান স্নান করাতে। মা যশোদার সেই বিশ্বাসে আজও বিশ্বাসী সাধারণ মানুষের ভক্ত হৃদয়। তাছাড়া মকর স্নান মানে শুধুই তো আর জলে ডুব দেওয়া নয়। তার সাথে চলে গঙ্গা পুজো ও সূর্য বন্দনা। মকরসংক্রান্তিতে পবিত্র গঙ্গায় স্নানের পাশাপাশি পুজো দিলে বা দানধ্যান করলে জীবনের সব যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি মেলে। এমনকি যাঁদের কুণ্ডলীর দোষ আছে, সেই দোষও কেটে যায় বলে বিশ্বাস করেন অনেকেই।

এ প্রসঙ্গে বীরভূমের কেন্দুলি গ্রামনিবাসী ‘গীতগোবিন্দ’-এর কবি জয়দেবের কথা না বললেই নয়। কবির ভক্তি আর আকুল প্রার্থনায় স্বয়ং গঙ্গা গতিপথ বদলে ঢুকে পড়েছিলেন অজয় নদের বুকে! কৃষ্ণভক্ত কবির জীবনের সেই অলৌকিক ঘটনা সত্যি হোক বা মিথ্যে, আধ্যাত্মিক ভাবনা ও বিশ্বাসের সঙ্গে গঙ্গাস্নান মিলেমিশে যে মাহাত্ম্যকে বয়ে নিয়ে চলেছে তাকে কী সত্যিই অস্বীকার করা যায়?

একসময় গ্রামবাংলার কুমারী মেয়েদেরকেও মকরসংক্রান্তির দিন থেকে একমাস ধরে পালন করতে হত কঠিন ব্রত। হাড়হিম করে দেওয়া ঠান্ডা জলে এক মাস যাবৎ রোজ ভোরে পুণ্যস্নান করতে হত তাঁদের। আলস্য, ঘুম, তন্দ্রা ইত্যাদি কামনায় জয় লাভ করার জন্য! মকরসংক্রান্তির পুণ্য অর্জনের লোভে এলাহাবাদ সঙ্গম হোক বা গঙ্গাসাগর, আজও দেশের নানা প্রান্ত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ এসে প্রতি বছর ভিড় জমান।

আর যাঁরা অত দূরে পুণ্যস্নানে যেতে পারেন না বা যাঁদের বাড়ির কাছে নেই গঙ্গা বা সাগরসঙ্গম? তাঁরা কি তবে পুণ্যলাভ থেকে বঞ্চিত হবেন? সেক্ষেত্রে তাঁরা ব্রাহ্মণ্য বিধান মেনে বাড়ির কাছাকাছি যে কোনও স্বচ্ছ জলাশয়ে মকর স্নান সারেন। মোটকথা মকরসংক্রান্তি আর মকর স্নান প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে। কারণ মকর স্নান ব্যতীত মকরসংক্রান্তিই অসম্পূর্ণ। সেটাই চিরন্তন বিশ্বাস।

Share
Published by
News Desk

Recent Posts