Durga Pujo

মহানবমীর দিন মনসা পুজো গ্রামবাংলার এই পুজোর প্রাচীন রীতি

আরতির ছন্দে মায়ের পায়ের কাছে নাচতে থাকে গোখরো। সে দৃশ্য এখনও বলতে গেলে পরিবারের লোকজনের গায়ে কাঁটা দেয়। যতক্ষণ আরতি হয় ততক্ষণ সাপটি এক জায়গায় টানা নেচে যায়।

মহাষষ্ঠী পুজোর সন্ধেয় শুরু হয়েছিল আরতি। পরিবারের সকলে প্রতিমার সামনে করজোড়ে দাঁড়িয়ে। ঠাকুরমশাই আরতি শুরু করেছেন সবে। এমন সময়ে আচমকাই মায়ের পায়ের কাছে হাজির এক গোখরো সাপ। আতঙ্কে সকলে পালাতেই পারতেন। বিশেষত যাঁর সবচেয়ে কাছে ছিল সাপটি, সেই ঠাকুরমশাইয়ের আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। কিন্তু এতটুকুও বিচলিত না হয়ে আরতি চালিয়ে যান তিনি। আর সেই আরতির ছন্দে মায়ের পায়ের কাছে নাচতে থাকে গোখরো। সে দৃশ্য এখনও বলতে গেলে পরিবারের লোকজনের গায়ে কাঁটা দেয়। যতক্ষণ আরতি হয়, ততক্ষণ সাপটি এক জায়গায় টানা নেচে যায়। আরতি শেষ হলে আবার যেখান থেকে এসেছিল সেখানে হারিয়ে যায় সেটি। তারপর আর তাকে দেখা যায়নি।

ঠাকুরদালান, ডানদিকে হরিমন্দির, ছবি – সৌগত দে

বর্ধমানের মেমারি স্টেশন থেকে ময়নামপুর থেকে ১ কিলোমিটার রাস্তা। এখানেই রয়েছে কাষ্ঠডিহি অপভ্রংশে কাটসিহি গ্রাম। লোকমুখে আজকাল আবার সে নামও ছোট হয়ে দাঁড়িয়েছে কাটসিতে। বিংশ শতাব্দীর শেষপ্রান্তে এসে এই গ্রামের মোড়ল বাড়ির দুর্গাপুজোর এই ঘটনা এখনও এক নিঃশ্বাসে বলে যান পরিবারের লোকজন। মোড়লবাড়ির পুজোর ইতিহাস দীর্ঘদিনের। পুজোর কথা জানেন না এমন ওই গ্রাম তো নয়ই, এমনকি আশপাশের ৫ গ্রামেও কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এবার এই পুজো ২২৩ বছরে পা দিল। মোড়লবাড়ির পুজোর পত্তন করেন এ পরিবারের পূর্বপুরুষ শম্ভুনাথ দে। সে সময়ে এলাকায় বেশ প্রতিপত্তি ছিল দে পরিবারের। পুজোয় আশপাশের গ্রামের সকলে মোড়লবাড়ির পুজোতেই খাওয়া দাওয়া করতেন। সেই খাওয়ানোর রীতি বাংলার মারণ দুর্ভিক্ষও স্তব্ধ করতে পারেনি।

বাংলা ১২০৪ সালে যে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল, সেই পুজো অদ্যাবধি বন্ধ হয়নি। তবে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রায় ১৫ বছর এ বাড়িতে মূর্তি পুজো হয়নি। হয়েছে ঘট পুজো। পরিবারের কর্তা সতীশচন্দ্র দে-র অকাল প্রয়াণ আচমকাই দে পরিবারের জন্য বড় ধাক্কার কারণ হয়। ছেলেরা ছোট। তাদের পুজো সামলানোর বয়স হয়নি। তবে ঠাকুমার উদ্যোগে ছেলেরা বর্ধমানে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হন। তারপর তাঁরাই ফের পারিবারিক পুজোর হাল ধরেন। মাঝের সময়টায় পুজো ঘটে হলেও পরম্পরায় ছেদ পড়েনি।

১৯৬২ সালের মাতৃপ্রতিমা

এখন এ বাড়ির পুজোর ঠাকুর যিনি গড়েন, তাঁর পরিবারই বংশ পরম্পরায় ঠাকুর গড়ে আসছেন। যে পুরোহিত পুজো করেন, তাঁর পরিবারও বংশ পরম্পরায় দে বাড়ির পুজো করে আসছেন। ঢাকি, নাপিতের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একরকম। এও মোড়ল পরিবারের এক বড় ঐতিহ্য। তবে পরিবারের কেউ আর এখানে সারা বছর থাকেন না। পুজোর সময়ে হাজির হন একে একে। পুজো শেষ হলে আবার ফিরে যান। একজন ম্যানেজার আছেন। তিনিই সবকিছু দেখভাল করেন। পাশের কুসুমগ্রামে একটি দোকানে ফর্দ দেওয়া থাকে। সেখান থেকে পুজোর আগে পুজোর যাবতীয় সরঞ্জাম এসে যায়। এ নিয়ে বাড়ির কাউকে ভাবতে হয়না। পুজোর কদিন বাড়িতেই রান্না হয়। বামুন ঠাকুর আসেন। বসে ভিয়েনও। তৈরি হয় রসগোল্লা, লেডিকেনি, বোঁদের মত মিষ্টি।

মোড়ল পরিবারের দুর্গা প্রতিমাকে অন্নভোগের নিয়ম নেই। নেই কোনও রাঁধা খাবার ভোগ হিসাবে দেওয়ার প্রথাও। এখানে নৈবিদ্যের আকারে শুকনো চাল দেওয়া হয়। আর থাকে ফল। কোনও রান্না করা খাবার ভোগ হিসাবে না দেওয়ায় ভোগ খাওয়ার উপায় নেই। তাই এ বাড়িতে পুজোর কদিন বামুনঠাকুরের রান্না করা খাবারই খান সকলে। পুজোর কদিন পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, মাংসের প্রবেশ নিষেধ। তবে মাছ আসে। অষ্টমী বাদে সবদিনই মাছ হয়। বাড়ির জনা ২৫ সদস্য। সঙ্গে স্থায়ী, অস্থায়ী কর্মচারি হিসাবে জনা ২৫। প্রতিদিন ৫০ জনের রান্না হয় এখানে।

মহাষ্টমীতে সন্ধিপুজো, ছবি – সৌগত দে

আগে এবাড়ির পুজোয় পাঁঠা বলির রীতি ছিল। কিন্তু একবার ১ কোপে না হওয়ায় ২ কোপে বলি হয়। সে বছর পরিবারের একজনের অকাল মৃত্যু হয়। পরিবারের সকলের ধারণা বলি ২ কোপের হওয়ার ত্রুটিই এই মৃত্যুর কারণ। পুরোহিতের পরামর্শে এরপর পাঁঠা বলি বন্ধ হয়ে শুরু হয় চালকুমড়ো বলি। ১৯৪৪ সালে সেই চালকুমড়ো বলি দেওয়ার সময়ও তা কোনও কারণে ১ বারে পুরোটা কাটেনি। ফলে ২ বারে কাটা হয়। সে বছরও কাকতালীয়ভাবে পরিবারের আরও একজনের মৃত্যু হয়। এরপর আর কোনও বলি এ পরিবারের পুজোয় হয়নি। পুরোহিতের নির্দেশে এ বাড়িতে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় বলি প্রথা। সে জায়গায় তারপর থেকে দুর্গার পা থেকে দরজা পর্যন্ত সিঁদুরের দাগ দেওয়া হয়। বলির পর রক্ত দিয়ে একসময়ে যে রক্তিম রেখা তৈরি হত, তা কালক্রমে সিঁদুরের দাগে প্রতীকী চেহারা নেয়।

এ পরিবারের পুজোর আর এক চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য হল মহানবমীতে দুর্গাপুজোর পাশাপাশি মনসা পুজো। এ বাড়ি সংলগ্ন মনসাগোরে পুকুর ছিল। সেখানে শুধুই সাপ কিলবিল করত। ছিল তার পাশেই একটি মনসাতলা। যা বাড়ির পাশে হলেও বাড়ির জমিতেই তৈরি। সেই মনসাতলায় পুজোর আয়োজন হয় নবমীতে। মোড়ল পরিবারের একান্ত রীতি এটি। এ পরিবারের সকলে বিশ্বাস করেন তাঁদের পরিবারের সবকিছু রক্ষা করছে গোখরো সাপ। তাই এখনও পৃথিবীর যে প্রান্তেই তাঁরা থাকুন না কেন, কোথাও সাপ হত্যা করেন না।

মনসাতলা, ছবি – সৌগত দে

কলকাতার পুজোয় সহজেই গঙ্গাকে পাশে পান বারোয়ারি উদ্যোক্তা থেকে পারিবারিক পুজোর সদস্যরা। ফলে নবপত্রিকা স্নান থেকে বিসর্জন, সবই হয় গঙ্গায়। কিন্তু কাটসিহি গ্রামের চৌহদ্দির মধ্যে কোথাও নদী নেই। ফলে মোড়ল পরিবার বংশ পরম্পরায় কাছের চৌধুরী পুকুরেই যাবতীয় প্রথা সারেন। এটাই এই পরিবারের রীতি। মহাসপ্তমীর সকালে এই চৌধুরী পুকুরেই নবপত্রিকা স্নান করান হয়। আবার বিজয়ার দিন বিসর্জনও হয় এই পুকুরেই। আগে কাঁধে গেলেও, এখন ঠাকুর বিসর্জনের জন্য ট্রলি ভাড়া করা হয়। ঠাকুর জলে পড়ার ২-৩ সপ্তাহ পর মাটি গলে গেলে কাঠামো তুলে আনা হয় মোড়লবাড়ির ঠাকুরতলায়। সেখানে প্রতি সন্ধেয় আশপাশে থাকা পরিবারের জ্ঞাতিরা কাঠামোয় ফুল দিয়ে ধূপ, ধুনো দিয়ে পুজো করে যান। বছর ১৫ কাটার পর কাঠামো নষ্ট হয়ে এলে, ফের তৈরি হয় নতুন কাঠামো।

মোড়লবাড়ির ঠাকুরদালান, ছবি – সৌগত দে

মোড়ল পরিবারে দুর্গাপুজোর সময়ে পরিবারের সকলে ঠিক হাজির হন। পুজোয় অংশ নেন। খাটাখাটনি করেন। উৎসবের আনন্দও উপভোগ করেন। বাড়িটা আলো, ঢাকের বাদ্যি আর মানুষের হুল্লোড়ে ভরে ওঠে। এ পরিবারের ঠাকুর যাই হয়ে যাক দশমীর দিন ভাসান হবেই। তারপর সকলে ফের ব্যাগ গুছিয়ে নিজের নিজের বাড়ি বা কর্মস্থলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। নিভে যায় আলো। থেমে যায় কলরব। আলো আঁধারিতে একলা পড়ে থাকে দুর্গামণ্ডপ। একটা বছরের অপেক্ষায়।

News Desk

কর্কট রাশির বৃহস্পতিবার দিনটা কেমন কাটবে ও শুভ সময়, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

কর্কট রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…

November 26, 2025

সিংহ রাশির বৃহস্পতিবার দিনটা কেমন কাটবে ও শুভ সময়, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

সিংহ রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…

November 26, 2025

কন্যা রাশির বৃহস্পতিবার দিনটা কেমন কাটবে ও শুভ সময়, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

কন্যা রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…

November 26, 2025

তুলা রাশির বৃহস্পতিবার দিনটা কেমন কাটবে ও শুভ সময়, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

তুলা রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…

November 26, 2025

বৃশ্চিক রাশির বৃহস্পতিবার দিনটা কেমন কাটবে ও শুভ সময়, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

বৃশ্চিক রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…

November 26, 2025

ধনু রাশির বৃহস্পতিবার দিনটা কেমন কাটবে ও শুভ সময়, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

ধনু রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…

November 26, 2025