আজ রাস পূর্ণিমা। হিন্দুধর্মের একটি পবিত্র দিন, পবিত্র তিথি। একই দিনে ৪টি উৎসবের এমন সমাহার সচরাচর দেখা যায়না। বৃন্দাবন, মথুরা, নবদ্বীপ, মায়াপুর এমনকি প্রতিবেশি বাংলাদেশেও মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে রাস উৎসব। আবার পঞ্জাবসহ ভারতের নানা প্রান্তে গুরুদ্বারে পালন করা হচ্ছে শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানকদেবের ৫৫১ তম জন্মবার্ষিকী। এজন্য কলকাতার রাস্তায় ধর্মীয় মিছিলও বার হয়।
এদিনই আবার দেবদীপাবলি উপলক্ষে সন্ধেবেলা প্রদীপের আলোয় গঙ্গার ঘাট সাজিয়ে তুলল হরিদ্বার ও বেনারস শহর। কার্তিক পূর্ণিমার পুণ্যলগ্নে মোক্ষলাভের আশায় গঙ্গার ঘাটে ঘাটে নেমেছে ভক্তদের ঢল। কলকাতার ঘাটগুলিতেও সকাল থেকেই পুণ্যলাভের আশায় ভক্তদের ঢল ছিল চোখে পড়ার মত।
কার্তিক মাসের পূর্ণিমাই রাস পূর্ণিমা। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এই দিন বৃন্দাবনের গোপিনী সকাশে রাধার সঙ্গে রাস উৎসবে মেতেছিলেন গোপশ্রেষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণ। গোপিনীদের নাচ ও শ্রীকৃষ্ণের সুমধুর বংশীধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছিল বৃন্দাবনের পবিত্রভূমি।
পরবর্তীকালে শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের এই মিলন উৎসবকে শ্রীচৈতন্যদেব নাম-সংকীর্তনের মধ্যে দিয়ে রাস মহোৎসবে পরিণত করেন।
শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, কেউ যদি তাঁকে জানতে চায়, তবে তাঁকে অবশ্যই ভক্তির আশ্রয়ে থাকতে হবে। এই দিনে তাই বৈষ্ণব ভক্তরা তাঁদের ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মেতে ওঠেন রাসলীলায়।
শুধুমাত্র ভারতের বিভিন্ন অংশেই নয়, প্রতিবেশি বাংলাদেশেও ঘটা করে রাস উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। মনিপুরের বাসিন্দাদের কাছে রাস একটি প্রধান ধর্মীয় নৃত্য-গীতের উৎসব।
শ্রীবিষ্ণু ও শিব ভক্তরাও এদিন মন্দিরে গিয়ে তাঁদের উপাস্য দেবতার পুজো করে থাকেন। পুণ্য অর্জনের জন্য সকাল সকাল নদীতে স্নান করেন। মন্দিরে বাতি বা প্রদীপ জ্বালান, দুঃস্থদের দান-ধ্যান করেন। দীপাবলির ঠিক পরের পূর্ণিমাতেই দেবদীপাবলি পালন করা হয়ে থাকে।
বিশ্বাস, এইদিন স্বয়ং ঈশ্বর মর্ত্যে নেমে আসেন গঙ্গা স্নান করতে। তাই এইদিন আলোর মালায় সেজে ওঠা গঙ্গার ঘাট। স্নানকরে ও প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজার্চনা করেন ভক্তরা।
এদিনই আবার পরেশনাথের মন্দির থেকে জৈন ধর্মাবলম্বীদের একটি শোভাযাত্রা বার হয় উত্তর কলকাতায়। দীর্ঘক্ষণের এই বর্ণাঢ্য পদযাত্রা চাক্ষুষ করতে বহু মানুষ রাস্তার দুধারে ভিড় জমান।