২৭ বছর ধরে হেঁটে চলেছেন তিনি, হেঁটে পৃথিবী ভ্রমণ করতে গিয়ে সমুদ্রও হেঁটেই পেরিয়েছেন
২৭ বছরে কোনও যানবাহনে ওঠেননি তিনি। এমনকি কোনও নৌকা বা গরুর গাড়িতেও নয়। স্রেফ পায়ে হেঁটে চলেছেন ২৭ বছর ধরে। এই পরিব্রাজককে কম সমস্যায় পড়তে হয়নি।
১৯৯৮ সালে তিনি তাঁর যাত্রা শুরু করেন। স্থির করেছিলেন কোনও যানবাহনে করে নয়, বিশ্ব ভ্রমণটা করবেন পায়ে হেঁটে। তখন অবশ্য জানতেন না কত সমস্যার মুখে তাঁকে পড়তে হবে তাঁর এই ইচ্ছাপূরণ করতে।
চিলির পুন্তা এরিনাস থেকে হাঁটা শুরু করেন তিনি। তারপর শুধুই হেঁটে চলা। সর্বত্র যে পিচ ঢালা রাস্তা পেয়েছেন তা নয়। অনেকসময়ই পাহাড়ি পথ, উপত্যকা, গহন জঙ্গল, পাথুরে জমি পার করতে হয়েছে তাঁকে।
এভাবে ২০০৬ সালের মধ্যে তিনি ২ আমেরিকা পার করে পৌঁছে যান আলাস্কায়। এবার তাঁর গন্তব্য ছিল রাশিয়া। কিন্তু সামনে বেরিং প্রণালী। এবার অন্য চ্যালেঞ্জ। তবে হার মানেননি ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের বাসিন্দা কার্ল বুশবাই।
বেরিং প্রণালী তখন বরফাবৃত। তিনি হাঁটা শুরু করেন সেই বরফের ওপর দিয়েই। জমাট বাঁধা সমুদ্রের উপরিতল। তার ওপর দিয়েই হেঁটে চলেন তিনি। আর সেভাবেই পার করে যান বেরিং প্রণালী। পৌঁছে যান রাশিয়ায়।
কিন্তু এখানে আবার অন্য সমস্যা। রাশিয়ায় তাঁকে এগোনোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। বরং তাঁকে আটক করা হয়। শুরু হয় উচ্চস্তরে তদ্বির। অবশেষে তিনি এগোনোর অনুমতি পেলেও রাশিয়ায় তাঁকে বারবার সমস্যায় পড়তে হয়। তবু তিনি থমকে যাননি। রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া, উজবেকিস্তান পার করেন।
একটা সময় তিনি ইরান ও রাশিয়াকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কাস্পিয়ান সাগরের রুটে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন। তা করতে গিয়ে তাঁকে কাস্পিয়ান সাগরের একটা অংশ পার করতে হয়।
কার্ল তো কোনও যানে উঠবেন না। নৌকাও নয়। তাই তিনি কাস্পিয়ান ধরে সাঁতার শুরু করেন। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সাঁতার। তারপর নৌকায় বিশ্রাম। ফের পর দিন সেখান থেকেই সাঁতার।
এভাবে ৩১ দিন ধরে সাঁতার কেটে তিনি কাজাখস্তান থেকে আজারবাইজান পৌঁছন। তারপর ফের হাঁটা। এই যাত্রাপথে তাঁকে ভিসার সমস্যা থেকে কোভিড-১৯-এর ভয়ংকর দিন, সবেরই সম্মুখীন হতে হয়।
কিন্তু নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি কার্ল। এভাবে তিনি ফের ইউরোপে প্রবেশ করেন। তিনি এখনও হেঁটে চলেছেন। ২০২৬ সালে তাঁর নিজের শহরে ফেরত যাওয়ার কথা।
সেখানেই শেষ হবে কার্লের বিশ্ব ভ্রমণ। এখনও পর্যন্ত তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ২৭ বছর ধরে হেঁটে চলেছেন বিশ্ব ভ্রমণ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে। কার্ল বুশবাইয়ের এই হেঁটে চলা বিশ্বের তাবড় সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে বারবার।

