Kolkata

বইমেলার ভিড়ে আজও অমলিন একান্ত প্রেম

Published by
Mallika Mondal

নতুন বইয়ের পাতায় কেমন একটা গোপন প্রেমের গন্ধ লেগে থাকে। সেই গন্ধের টানে প্রতিবছর বইপ্রেমীরা ছুটে আসেন কলকাতা বইমেলায়। বছর ঘুরে যায়। তবু পাল্টায় না বইমেলার সেই অমোঘ আকর্ষণ। এবারে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার নতুন আস্তানা সল্টলেক করুণাময়ী। মেলায় কেউ আসছেন সপরিবারে। কেউ এসেছেন একা। কেউ বা বইমেলার অলিগলি ঘুরে বেড়িয়েছেন মনের মানুষের সাথে। আরেক দল বইমেলায় হামলে পড়েছেন সপার্ষদ। ৪-৫ বা তার বেশি সংখ্যার ব্যাটেলিয়ন নিয়ে বইয়ের দোকান বা ফুড কোর্টে হামলে পড়ার উদ্দীপনা নজর কেড়েছে এবারেও।

এবারে সেন্ট্রাল পার্কের প্রতিবেশি বইমেলা। রাজ্য, দেশ, বিদেশের নানা বইয়ের রাজকীয় সম্ভারে পরিপূর্ণ পার্কে যুগলরা উঁকি দেবেন না, তাও কি হয়। রোদের তেজ একটু কমতেই তাই সেন্ট্রাল পার্ক হয়ে মেলামুখী হয়েছেন কপোত-কপোতীরা।

মেলা প্রাঙ্গণের আশেপাশে আছে অনেক স্কুল, কলেজ। পড়ুয়া কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের কাছে এবারে এক মোক্ষম সুযোগ। ছুটির পরেই বইমেলায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি অনেকেই! সামনে বোর্ড বা টেস্টের পরীক্ষার তোয়াক্কা না করেই বইমেলায় ঘুরে যাচ্ছে তারা। কারও একবারেই সমাপ্ত হয়েছে মেলা পরিক্রমার পর্ব। কেউ আবার ঘরের দুয়ারে আয়োজিত বইমেলার রস নিংড়ে নিতে হাজির হয়েছে ২-৩ বার।

মেলার অনতিদূরেই সল্টলেকের আইটি সেক্টর। কাজের শেষে সহকর্মীদের সাথে এক ফাঁকে বইমেলায় ঢুঁ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের চাকুরীজীবীরা। কেউ মেলার সামনে দাঁড়াতে বলেছেন প্রেমিকাকে। তারপরর যথাসময়ে দুজনে ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেছেন একান্তে। ইতস্তত ঘুরতে ঘুরতে চা পানে মন দিতে দেখা গেল কোনও কোনও যুগলকে। কেউ আবার হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে কোমরকে বিশ্রাম দিতে বসে পড়লেন মেলা প্রাঙ্গণের এদিক ওদিক। সামনেই ভ্যালেন্টাইনস ডে। পড়ুয়া প্রেমিকাকে নতুন গল্পের বই উপহার দিয়ে চওড়া হাসি খেলে গেল প্রেমিকের মুখে। বই কেনা সাঙ্গ। অনেকে প্রেমের সঙ্গে সঙ্গে বই খোঁজার পর্বটাও সেরেছেন যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই। কিনেছেন প্রয়োজনীয় বই। পাশে থাকা প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছেন বইয়ের গুণগত মান বা তার উপযোগিতা নিয়ে।

এবারে দরকার ভূরিভোজ। অতএব দুজনে দুজনার পাশটি ঘেঁষে রওনা দিয়েছেন ফুড প্যাভিলিয়নে। বিকেল নামতেই মেলায় বেজায় ভিড়। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে একে অপরের হাত একটু শক্ত করে ধরাই নিরাপদ। বইমেলা মানেই প্রেম, মেলার আনাচে কানাচে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা দুটো হাত কিন্তু সেকথারই জানান দিল ফের। সঙ্গে রইল স্মৃতির মণিকোঠায় দিনটাকে ধরে রাখার জন্য সেলফি।

এবারের বইমেলা আরও বেশি সাজানো গোছানো। বইমেলায় ঢোকার প্রবেশ পথ সুসজ্জিত আলোকমালায়। আছে বসার জায়গা। যেখানে বসে কারও জন্য অপেক্ষা করা বা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বাধা দেওয়ার মতো কেউ নেই। এমন সুসজ্জিত নিরালাকে কি কেউ ছাড়তে চায়। তাই মেলা ছাড়ার আগে টুকরো টুকরো ছবি, নতুন গন্ধমাখা বই, পেটপুজো আর একরাশ ভালোলাগার ‘পারফিউম’ গায়ে মেখে একান্তে কথার সাগরে ডুব দিতে দেখা গেল যুগলদের। আর পরিচিত ঢঙে খিলখিল হাসিতে মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়ে ‘মনখারাপের গর্তে’ পাড়ি জমাল এলোমেলো বন্ধুত্বও।

Share
Published by
Mallika Mondal

Recent Posts