Feature

এই বাঙালির অবদান ভোলা উচিত নয়, তাঁর জন্যই রেলে তৈরি হয় টয়লেট

ভারতীয় রেলের ইতিহাস যথেষ্ট প্রাচীন। কিন্তু ট্রেন চালু হওয়ার ৫০ বছর পরও কোনও ট্রেনে টয়লেট ছিলনা। সেটা তৈরি হয় এক বাঙালির জন্য।

Published by
News Desk

ভারতীয় রেল তার যাত্রা শুরু করে ১৮৫৩ সালে। তারপর তার যাত্রাপথ বাড়তে থাকে। ৫০ বছরে ভারতীয় রেল নানা রুটে ছড়িয়ে পড়ে। দূরপাল্লার যাত্রার জন্য রেল ছিল প্রায় একমাত্র ভরসা। কিন্তু ১৯০৯ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রেলে কোনও টয়লেট ছিলনা।

দূরপাল্লার যাত্রীদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে অপেক্ষা করতে হত আগামী স্টেশন আসা পর্যন্ত। ট্রেন চলা অবস্থায় টয়লেটের সুবিধা কোনও ট্রেনে ছিলনা।

১৯০৯ সালে একটি চিঠি রেলের কর্তাদের হাতে এসে পড়ে। তখন ব্রিটিশ রাজত্ব। সে চিঠি লেখেন এক বাঙালি যাত্রী। নাম অখিলচন্দ্র সেন। তিনি ইংরাজিতেই চিঠিটি লেখেন।

সে ইংরাজি সঠিক ব্যাকরণ মেনে না হলেও তিনি ব্রিটিশ রেল কর্তাদের বোঝাতে পারেন কি ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে।

তিনি যে চিঠি দেন তার মোদ্দা কথা হল, আহমদপুর স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোর পর ট্রেন থেকে নেমে তিনি হাতে লোটা নিয়ে মলত্যাগ করতে গিয়েছিলেন।

কারণ অনেক কাঁঠাল খেয়ে অখিলবাবুর পেট কামড়াচ্ছিল। তিনি যখন মলত্যাগ করছেন ঠিক তখনই ট্রেনের গার্ড ট্রেন চালুর হুইসল বাজিয়ে দেন।

ট্রেন ছেড়ে চলে যাবে। তাই অখিলবাবু ওই অবস্থাতেই এক হাতে লোটা আর অন্য হাতে ধুতি নিয়ে কোনওক্রমে ছুটতে শুরু করেন। কিন্তু আহমদপুর স্টেশনেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। ট্রেন পর্যন্ত আর পৌঁছতে পারেননি।

পড়ে গিয়ে তাঁর পোশাক সকলের সামনেই খুলে যায়। চরম অপ্রস্তুত অবস্থায় অখিলবাবু দেখেন ট্রেন তাঁকে না নিয়েই চলে গেল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাঁর জন্য কি ৫টা মিনিট ট্রেনটা দাঁড় করিয়ে রাখা যেত না?

অখিলবাবু ওই ট্রেনের গার্ডকে বড় অঙ্কের জরিমানা করার নির্দেশ দেন। আর তা না করলে তিনি তাঁর সঙ্গে ঘটা এই ঘটনা সংবাদপত্রে ছাপিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন। অখিলবাবুর এই চিঠি সেদিন রেলকর্তাদের চোখ খুলে দেয়। তারপরই ট্রেনে শুরু হয় টয়লেট তৈরির কাজ।

তাই আজ যখন ট্রেন ভ্রমণের সময় কেউ নিশ্চিন্তে ট্রেন চলাকালীন টয়লেট ব্যবহার করেন, তখন একবার অন্তত এই বাঙালি মানুষটির কথা মনে পড়া উচিত। যাঁর জন্য ১৯০৯ সালের পর ভারতের দূরপাল্লার ট্রেনে টয়লেট রাখা শুরু হয়েছিল।

Share
Published by
News Desk