Mythology

মহাদেবকে সন্তান রূপে পেতে আরাধনা করলেন রাজা-রানি, জন্ম নিলেন মহাবীর

অঞ্জনা ও কেশরী শিবকে পুত্র হিসাবে পাওয়ার জন্য এক সময় আরাধনা করেছিলেন। তাঁদের ভক্তি ও আরাধনায় অত্যন্ত প্রীত ও প্রসন্ন হন শঙ্কর ভগবান।

Published by
Sibsankar Bharati

বানররাজ কেশরী রাজত্ব করতেন সুমেরু পর্বতে। তাঁর স্ত্রী অঞ্জনা ছিলেন শাপভ্রষ্টা অপ্সরা। বানরশ্রেষ্ঠ কুঞ্জরের কন্যা। কেশরীর স্ত্রী অঞ্জনার গর্ভে পবনরাজের ঔরসে জন্ম হয় হনুমানের। নিজ পত্নীর গর্ভে অন্য পুরুষের ঔরসজাত পুত্রকে ক্ষেত্রজ পুত্র বলে। হনুমান কেশরীর ক্ষেত্রজ পুত্র।

হনুমান জন্মাতেই অঞ্জনা শাপমুক্ত হয়ে চলে যাচ্ছিলেন। হনুমান তখন মায়ের কাছে জানতে চান তাঁর কী অবস্থা হবে? অঞ্জনা বলে যান অমর হবেন হনুমান। সূর্যের মতো পাকা ফল খাবেন।

ফাইল : সূর্যোদয়

অঞ্জনা চলে যাওয়ার পর হনুমান এক লাফে ধরতে যান উদীয়মান সূর্যকে পাকা ফল মনে করে। ছেলেকে বাঁচাবার জন্য এ সময় পবনদেব তথা বায়ু শীতল হয়ে পড়েন। সূর্যদেবও দগ্ধ না করে রক্ষা করেন শিশু বলে।

এসময় সুযোগ বুঝে রাহু সূর্যকে গ্রাস করতে এলে রাহুকে সামনে পেয়ে হনুমান তাকেই ধরতে যান। অসহায় রাহু তখন দেবরাজ ইন্দ্রের শরণাপন্ন হলেন। ইন্দ্র ঐরাবতে চড়ে উপস্থিত হলেন।

ফল মনে করে ঐরাবতকে গিলতে গেলে হনুমানকে বজ্রাঘাত করেন দেবরাজ। ফলে বাম হনু (চোয়াল) ভেঙে যায়। হনুমান পৃথিবীতে এসে পড়ে যান অচেতন অবস্থায়।

বজ্রপাত, প্রতীকী ছবি

সন্তানের এ অবস্থা দেখে অত্যন্ত রুষ্ট হলেন বায়ু। তখন বায়ু সমস্ত বায়ুমণ্ডলকে নিয়ে নেন নিজের মধ্যে। ফলে সমগ্র প্রাণিজগৎ ধীরে ধীরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যেতে থাকায় বজ্রের প্রভাবকে সরিয়ে নেন দেবরাজ। ক্রমে চেতনা ফিরে সুস্থ হয়ে ওঠেন বায়ুপুত্র হনুমান।

অন্য মতে হনুমান পড়ে যাচ্ছেন দেখে বায়ু ধরে ফেলেছিলেন হনুমানকে। ছেলেকে নিয়ে যান পাতালে। তখন বায়ুর অভাবে সৃষ্টি ধ্বংস হতে যায়। এর প্রেক্ষিতে দেবতারা ছুটলেন পিতামহ ব্রহ্মার কাছে।

আনুপূর্বিক সমস্ত ঘটনার কথা শুনে দেবতারা সকলে ব্রহ্মার সঙ্গে এলেন পাতালে। ব্রহ্মার স্পর্শে মৃতপ্রায় হনুমান সুস্থ হলেন। সকলে শান্ত করলেন পবনদেব তথা বায়ুকে। সৃষ্টি রক্ষা পেল।

এবার ব্রহ্মা বর দিলেন ‘হনুমান ব্রহ্মজ্ঞ ও চিরায়ু হবেন।’ দেবরাজ ইন্দ্র বললেন, হনু ভেঙে যাওয়ার জন্য নাম হবে হনুমান। বর দিলেন ইচ্ছামৃত্যুর। সূর্যদেব তাঁর তেজের শতাংশ দান করলেন হনুমানজিকে। অবধ্য হওয়ার বর দিলেন স্বয়ং মহাদেব ও দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা।

বংশে বাতি দিতে একমাত্র আদুরে নাতির যেমন একশো আট নাম, তেমনই হনুমানজির। এখানে কয়েকটা, অঞ্জনার পুত্র বলে অঞ্জনেয়, বজরঙ্গবলী, পবনদেবের ঔরসে তাই পবনপুত্র, মহাবীর, সংকটমোচন, হনুমত, হনুমন্ত, মারুতিনন্দন ইত্যাদি।

ভগবান শিবের আরেক নাম রুদ্র। অঞ্জনা ও কেশরী শিবকে পুত্র হিসাবে পাওয়ার জন্য এক সময় আরাধনা করেছিলেন। তাঁদের ভক্তি ও আরাধনায় অত্যন্ত প্রীত ও প্রসন্ন হন শঙ্কর ভগবান। পুত্ররূপে জন্ম নেন অঞ্জনার গর্ভে। শিব অনন্ত শক্তির অধিকারী। তাঁর বরে বলীয়ান হনুমান হলেন মহাবীর। শিব তথা রুদ্রের করুণাধন্য বলে মহাবীরের অন্য নাম মহা রুদ্র।

পুরাণ ও পরাশর সংহিতা অনুসারে ত্রেতাযুগে, বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষের দশমী তিথিতে হনুমানের জন্ম হয় তিরুমালা পর্বতে। হনুমানজয়ন্তী পালন করা হয় চৈত্রমাসের পূর্ণিমা তিথিতে।

Share
Published by
Sibsankar Bharati

Recent Posts