রাম, সীতা ও লক্ষণ, ছবি - সৌজন্যে - উইকিমিডিয়া কমনস
অযোধ্যায় দর্শনীয় যা কিছু তা সবই প্রায় দেখলাম। শুনলাম অনেকের মুখে অতীত অযোধ্যার নানান কথা। তারপর যেখান থেকে শুরু করেছিলাম ফিরে এলাম সেখানে। সরযূতীরে রামঘাটে। ডানদিকে তাকালে শ্মশান। এই ঘাটের বাঁপাশে সাধুসন্ন্যাসীদের অসংখ্য ঝুপড়ি। ঝুপড়িগুলো অধিকাংশই হোগলাপাতার। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে রামায়ণীযুগের সরযূ। এত বয়সেও যেন পূর্ণ যুবতী। এতটুকু ভাঁটা পড়েনি দেহে। যৌবনের বান ডেকে চলেছে সরযূর বুকে। মনের সমস্ত মলিনতাই দূর হয়ে যায় সরযূর সঙ্গে দেহমিলনে।
সরযূকে ডানপাশে রেখে চলেছি পাড় ধরে। বাঁদিকে সাধুদের ডেরা। এসে দাঁড়ালাম বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি একটা ঝুপড়ির সামনে। বাঁশের বেড়া। ছাউনি হোগলাপাতার । বেশ বোঝা যায় শীতকালে ঠান্ডা ঢোকে হু হু করে। একপাল্লার দরজা। সেটাও বাঁশের চটার। ঝুপড়ির উচ্চতা এমন, একটু ঘাড় নিচু করেই ঢুকতে হয়।
আমি ঢুকলাম। দেখলাম এক বৃদ্ধ সাধুবাবা বসে আছেন আসনে। প্রশস্ত কপালজুড়ে গোপীচন্দনের তিলক। সারাদেহের বিভিন্ন অংশে চন্দনের ছাপ চিতাবাঘের মতো। অথচ যেন শান্ত সৌম্যের প্রতীক। মাথার মাঝামাঝি পর্যন্ত টাক। পিছনে সামান্য চুল। গালের দাড়ি নেমে এসেছে পেট পর্যন্ত। ধবধবে চুল দাড়ি। বয়েসের জন্যে রোগা ভাবটাই চোখে পড়ে বেশি তবে একেবারে রোগা নয়।
চোখে মুখে উজ্জ্বলতার ছাপ। রামায়েৎ সম্প্রদায়ের সাধু। তিলক দেখেই বুঝলাম। খালি গা হাঁ করে আছে। বুক ভর্তি পাকা লোম। বয়েস পঁচাত্তরের নিচে হবে না বরং বেশি বলাই ভাল। আয়ত চোখ। মাঝারি মাপের টিকালো নাক। ঘরে দেখছি সামান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেটুকু না থাকলে নয়। সাধুবাবার বাঁপাশে ছোট্ট একটা আসন। তাতে রাম সীতা আর তাঁর গুরুদেবের ফটো। কম্বলের আসনে বসে আছেন তিনি। ঝুপড়িতে ঢোকামাত্র বললেন,
– বয়ঠো বেটা, বয়ঠো।
বলেই একটুকরো ছেঁড়া চট পেতে দিলেন। আর কিছু দেয়ার মতো তাঁর ছিল না। তবে কণ্ঠে ছিল আপন করে নেয়া আন্তরিকতার সুর। এ সুর নিঃস্বার্থ সাধুদেরই হয়, গৃহীদের নয়। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। হাসিমুখে বললেন,
– বেটা অযোধ্যা দর্শন করনে আয়া?
ঘাড় নেড়েও মুখে বললাম,
– হাঁ বাবা।
আবার প্রশ্ন করলেন,
– অভি তু কাঁহা সে?
আলতো হাসি হেসে বললাম,
– কলকাত্তা সে।
একটু বিস্ময়ের সুরে সাধুবাবা বললেন,
– ওতো অনেক দূর।
কথায় তাল দিয়ে বললাম,
– হ্যাঁ বাবা, অনেক দূর। আপনি কখনও গেছেন কলকাতায়?
একগাল হেসে বললেন,
– কলকাতার নাম শুনেছি বেটা তবে যাইনি কখনও।
এবার সাধুবাবার অতীত জীবন প্রসঙ্গে জানার আগ্রহে বললাম,
– বাবা, খুব অল্প বয়েসেই গৃহত্যাগ করেছেন বুঝি?
কি সুন্দর হাসিমাখা মুখখানা সাধুবাবার। বললেন,
– হ্যাঁ বেটা, বয়েস তখন কুড়ি বাইশ হবে।
এটুকু বলে একটা তোবড়ানো কোটো থেকে কিছু ভাঙ্গা লাড্ডু আমার হাতে দিয়ে বললেন,
– খা লে বেটা, রামজির প্রসাদ।
সাধুসন্ন্যাসীদের দেয়া প্রসাদ পাওয়ামাত্র খেতে হয়, তাই দেরি না করে মুখে পুরে দিলাম। বললাম,
– আপনাদের মধ্যে তো খুব ছোটবেলাতেই বিয়ে হয়। আপনি কি…
কথা শেষ হতে দিলেন না। শিশুর মতো হেসে উঠে বললেন,
– না বেটা, ও পথে আমাকে যেতে হয়নি।
– তাহলে কেমন করে এলেন এই জীবনে?
এত হাসিমাখা প্রসন্ন মুখ ভাবা যায় না। বললেন,
– একেবারে ছোটবেলা থেকেই সংসার আমার ভাল লাগত না। সব সময় মন থাকত বাইরে বাইরে। মনটা যে কি খুঁজত, কাকে খুঁজত কিছুই বুঝতাম না। আমি যে কি চাই তা নিজেও বুঝে উঠতে পারতাম না। অথচ সাধু হব এমন কোনও বাসনাও আমার কিছু ছিল না। তবে মানসিক দিক থেকে কেমন একটা অতৃপ্তিতে ভুগতাম। আর সব ছেলেদের মতো আমিও যেতাম গ্রামের পণ্ডিত মশাই-এর কাছে। পড়াশুনা কিছু করতাম না।
একটু চুপ করে রইলেন। হয়ত ভাবলেন কিছু। পকেট থেকে একটা বিড়ি বের করে বললাম,
– বাবা, আপনি কি বিড়ি খান?
প্রসন্ন মনে বললেন,
– না বেটা, আমার কোনও নেশা নেই।
বলে কয়েক মুহুর্ত কি যেন ভেবে বললেন,
– দে একটা, তুই যখন বলছিস খাই।
একটা বিড়ি ধরিয়ে দিলাম সাধুবাবার হাতে। দু-একটা টান দিয়ে কাশলেন খুকখুক করে। কাশি থামতে বললেন,
– খুব ছোটবেলাতেই বাবা মারা যান। আমাদের পারিবারিক অবস্থাও খুব একটা ভাল ছিল না। সামান্য ক্ষেতি জমি থেকে যা আয় হত তাতে সংসার চলত কোনওরকমে। আমি নিজেও কোনও কাজকর্ম করতাম না। আসলে বেটা, আমার কোনও কিছুই ভাল লাগত না। পাগলের মতো এখান ওখান করেই কেটে যেত দিনগুলো।
কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম সাধুবাবার প্রশান্ত মুখের দিকে। তিনি বলে চললেন নির্লিপ্তভাবে,
– আমার যখন বয়েস আঠারো উনিশ, তখন হারালাম মাকে। এমনিতেই মনের দিক থেকে ছিলাম নিঃসঙ্গ। তারপর মা চলে যাওয়ায় আরও কেমন যেন হয়ে গেলাম। হঠাৎ একদিন ভাবলাম, ‘দূর শালা, সংসার কো মারো গোলি’ বলে বেরিয়ে পড়লাম।
– বাড়িতে আপনার আর কে কে ছিল? দেশ ছিল কোথায়?
উত্তরের জন্য অনেক সাধুবাবার কাছে বেগ পেতে হয়, এখানে তেমন হচ্ছে না বলে মনে বেশ আনন্দ হচ্ছে। হাসিমুখে বললেন,
– বাড়ি ছিল গুজরাটের পোরবন্দরে। ভাই বোন আত্মীয়স্বজন সবাই ছিল। তবে ছোটবেলা থেকে সংসারের প্রতি আকর্ষণ ছিল না বলে বাড়ির সবাই বলত, ও ব্যাটা সাধু হয়ে যাবে। বেটা, একদম ‘সাধু’-ই বনে গেলাম।
– দীক্ষা কি আপনার গৃহত্যাগের আগে হয়েছে, না পরে?
– ঘর ছাড়ার পর, বেনারসে।
– গৃহত্যাগের পর একবার জন্মভূমি দর্শনে যেতে হয় শুনেছি, আপনি কি গেছেন কখনও?
একটু দেরি না করে উত্তর দিলেন,
– না বেটা, আমি যাইনি কোনওদিন।
সাধুবাবা দু-চারটে টান দিয়ে ফেলে দিলেন বিড়িটা। আবার বিড়ি খাওয়ার কথা বলতে হাত নেড়ে না করলেন। নিজে একটা ধরিয়ে বললাম,
– এর আগে কোথায় ছিলেন, অযোধ্যায় আছেন কতদিন?
খুশি মনেই বললেন,
– ভারতের বিভিন্ন তীর্থ পরিক্রমা করেই জীবনের বহু বছর কেটে গেছে আমার। অযোধ্যায়ে পড়ে আছি আজ প্রায় বছর পনেরো। বেটা, বড় শান্তির জায়গা রামজির এই অযোধ্যা।
জিজ্ঞাসা করলাম,
– কি করে চলে আপনার?
পাশের আসনে রাম সীতা আর তার গুরুজির বাঁধানো ছবি দেখিয়ে বেশ আনন্দের সঙ্গে বললেন,
– গুরুজির দয়াতেই আমার চলে যায়। কোনও কোনওদিন কোনও তীর্থযাত্রী এসে কিছু দিলে তাতে হয়ে যায় নইলে ভিক্ষে করি। একটা তো পেট। কোনও অসুবিধে হয় না বেটা।
২৭ বছরে কোনও যানবাহনে ওঠেননি তিনি। এমনকি কোনও নৌকা বা গরুর গাড়িতেও নয়। স্রেফ পায়ে…
মেষ রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…
বৃষ রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…
মিথুন রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…
কর্কট রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…
সিংহ রাশির আজকের দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, রাশিফল ও দৈনিক সময়সূচী অনুযায়ী প্ল্যানিং করুন আজ…