Feature

কে বলে ভগবান নেই, জ্যোতিষীর কাছে মহিলার গোপন স্বীকারোক্তি

ভদ্রমহিলার বয়স ৫৫। চরম পাপ করেছি, তার ফল তো আমাকে ভুগতেই হবে। আজ যে কথা আপনাকে বলব, তা জীবনে কখনও কারও কাছেই বলিনি।

Published by
Sibsankar Bharati

আজ পর্যন্ত আমি একটা মানুষও পাইনি, যে সুখী ও সমস্যাহীন। অজস্র জীবন-জিজ্ঞাসার গন্ধমাদন নিয়ে এসেছে আমার কাছে, সুখের আশে।

ভদ্রমহিলার বয়স ৫৫। আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে পোশাকে, চোখেমুখে। ফরসা টুকটুক করছে। মাথায় কোঁকড়া চুল। গোলগাল চেহারা। চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। নিজের গাড়িতে করেই এসেছিলেন হাত দেখাতে। ভদ্রমহিলার জ্যোতিষ বিচার করে এক জায়গায় লিখেছিলাম, ‘সংসারজীবনে সব কিছু পেলেও মৃত্যুর দিন পর্যন্ত মানসিক শান্তি পাবে না।’

এই কথাটুকুর ওপর ভিত্তি করে ভদ্রমহিলা করুণ কণ্ঠে বলেছিলেন,

– আপনি ঠিকই বলেছেন। সংসারজীবনে একটা মেয়ে যা চায় তার চেয়েও আমি অনেক অ-নে-ক বেশি পেয়েছি। কী নেই আমার, সব আছে, অনেক বেশি বেশি আছে। নেই শুধু একটাই – শান্তি। আমি জানি জীবনে যতদিন বাঁচব, শান্তি আমি পাব না কোনও দিনই। এর জন্য দায়ী আমি নিজেই, তবুও এসেছি আপনার কাছে।

শিবশংকর ভারতী

এই পর্যন্ত বলে একটু থেমে আবার বললেন,

– চরম পাপ করেছি, তার ফল তো আমাকে ভুগতেই হবে। আজ যে কথা আপনাকে বলব, তা জীবনে কখনও কারও কাছেই বলিনি। বছর পঁচিশেক আগের কথা। দেশের বাড়িতে সম্পত্তির একটা ভাগাভাগি নিয়ে আমার ছোট বোনের সঙ্গে তখন চরম তিক্ত সম্পর্ক। বলতে পারেন, কেউ কারও মুখ দেখি না। এই সম্পত্তির ব্যাপারেই বাপের বাড়িতে আমিও গেছি, বোনও গেছে। দু’দিন পরের কথা। বাড়ির পিছনেই আমাদের একটা বড় পুকুর ছিল। ওই পুকুরেই দুপুরে দেখছি আমার ছোট বোনের পাঁচ বছরের ছেলেটা জলে ডুবে যাচ্ছে।

ঘাটে কেউ নেই। আমি দেখছি কিন্তু একবার চিৎকার তো করলামই না, বাঁচানোর চেষ্টাও করলাম না। মনে মনে খুশি হলাম। ভাবলাম, ‘আমার সঙ্গে হিংসা করার ফল এবার বুঝুক। বেশ হয়েছে।’ যাই হোক, পরে পুকুর থেকেই মৃতদেহ পাওয়া গেল। ছেলের মৃত্যুতে বোনের বুকফাটা কান্না দেখে আমার সেদিন এতটুকুও দুঃখ হয়নি।

এবার বলি আমার কথা। আমার একমাত্র ছেলে ডাক্তার। বিয়ের সম্বন্ধ করেছি। দিন-তারিখ সব পাকা। আশির্বাদও হয়ে গেছে। একদিন বিয়ের জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে আমরা মা-ব্যাটায় বেরিয়েছি। তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হতে গিয়ে আমার ছেলে পড়ল একেবারে বাসের তলায়। চোখের সামনেই দেখলাম মাথাটা থেঁতলে গেল। এটা দেখার সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ল আমার বোনের ছেলের মৃত্যুর কথা।

এই ঘটনায় তখন আমি ভেঙে পড়িনি, আজও নয়। চরম পাপ করেছিলাম, ভগবান প্রতিশোধ নিলেন। কে বলে ভগবান নেই? তিনি আছেন বলেই তো ছেলেটা আমার নেই। তিনি উচিত শিক্ষাই দিয়েছেন আমাকে।

কথাগুলো শেষ করেই ভদ্রমহিলা হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন। মুখ থেকে একটা কথাও সরল না আমার। অবাক বিস্ময়ে আমি তাকিয়ে রইলাম ভদ্রমহিলার মুখের দিকে।

Share
Published by
Sibsankar Bharati

Recent Posts