Astro Tips

শনিদেব জীবনে কী প্রভাব ফেলতে চলেছেন তা বোঝার উপায়

ভগবান শনিদেবের অপার করুণা ও কৃপাসম্পাত ছাড়া কঠোর কঠিন সাধনায় কিছুতেই উত্তরণ সম্ভব নয়। শনিদেব প্রসন্ন আছেন না তাঁর রোষে পড়া সম্ভাবনা।

Published by
Sibsankar Bharati

নিরপরাধ নিষ্কলঙ্ক অপাপবিদ্ধ মুক্ত পুরুষ এই মহাতাপস স্বর্গলোকে দেবদেবী থেকে শুরু করে মর্তলোকে মানুষকূলে আবালবৃদ্ধবনিতার চোখে বিনা দোষে দোষী ও ভীতিপ্রদ দেবতা। নাম শুনলেই যেন আতঙ্ক। অনেকে তো মুখে নাম উচ্চারণ করতেই ভয় পায়। ডাকে বড়বাবা কিংবা বড়ঠাকুর বলে। ভগবান শনিদেবের অপার করুণা ও কৃপাসম্পাত ছাড়া কঠোর কঠিন সাধনায় কিছুতেই উত্তরণ সম্ভব নয়। অথচ অমূলক ভীতিতে মানুষের মন আচ্ছন্ন।

ভগবান শ্রীবিষ্ণু দ্বারা পরিচালিত নবগ্রহ। জন্মজন্মান্তরের অর্জিত কর্মফল ভোগ করে মানুষ। শ্রীবিষ্ণু সেই সুকর্ম বা কুকর্মের ফলভোগ করান নবগ্রহের মাধ্যমে। কোনও গ্রহের নিজস্ব কোনও ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য নেই। নির্বিকার চিত্তে শ্রীবিষ্ণুর আজ্ঞাবহ হয়ে, তাঁরই নির্দেশিত ফল প্রদান করে থাকেন নবগ্রহ। এ থেকে ভগবান শনিদেবও ব্যতিক্রম নন। যে কোনও নারী-পুরুষের জন্মকুণ্ডলীতে প্রসন্ন শনিদেবের মাধ্যমে মানুষ যেমন প্রবল ধন ও ঐশ্বর্যশালী এবং অসাধারণ যশোভাগ্যযুক্ত হতে পারে, তেমনই পার্থিব জীবনে অপ্রসন্ন শনিদেব বছরের পর বছর ধরে কষ্টের চরমতম অন্ধকারময় কারাগারে ফেলে রাখতে পারেন জীবিত রেখে। মানুষের জীবনে শনিদেব যেমন আনন্দঘন মহিমময় রূপ, তেমনই বীভৎস ও ভয়ংকর রূপেও তিনি।

শনিদেব, ছবি – সৌজন্যে – উইকিপিডিয়া

ভগবান সূর্যদেবের দুটি পুত্র ও কন্যা একটি। যমরাজ, শনিদেব ও যমুনা। এঁরা তিন ভাইবোনই কৃষ্ণবর্ণ। উগ্রতেজা সূর্যদেবের উগ্রবীর্যের কারণে এঁদের তিনজনের গায়ের রং হয়েছে কালো। সূর্যদেবের পত্নী সংজ্ঞাদেবী। সংজ্ঞার ছায়া থেকে সৃষ্টি হয়েছিলেন সংজ্ঞার প্রতিকৃতি, নাম ছায়া। এই ছায়ার গর্ভজাত সন্তান শনিদেব। ছায়ার আর এক নাম সুবর্ণা। জাতিতে ক্ষত্রিয় ও কাশ্যপ গোত্র।

ভগবান শনিদেবের কৃষ্ণবর্ণ দেহে চারটি হাত শোভাবর্ধন করে। মাথায় রত্নখচিত মুকুট। সারা অঙ্গ শ্যামলতায় সুশোভিত। সুদৃশ্য কুণ্ডলমণ্ডিত দুটি কান। মণিমালায় সুন্দরতায় ভরপুর গলা। চারটি হাত শোভিত ত্রিশূল গদা পাশ ও বল্লমে। শনিদেব রৌদ্ররূপ ধারণ করে এই অস্ত্রগুলির সাহায্যে মানুষের সর্ববিধ দুঃখ নাশ করে থাকেন।

অধিকাংশ মানুষের ধারণা শনিদেব দুঃখদায়ী, সম্পত্তি ও বিত্তনাশক, পীড়াদায়ক, ক্রূর, অশান্তি ও অমঙ্গলকারী গ্রহ। কিন্তু বাস্তবে তা নয়, স্বভাবে শনিদেব গম্ভীর, কঠোর তপস্বী, কূটনীতিজ্ঞ, অত্যন্ত নিষ্ঠা ও ন্যায়প্রিয়, দয়ালু, কৃপালু ও অতি শীঘ্র প্রসন্ন হওয়া দেবতা। পূর্বজন্ম কিংবা বর্তমান জন্মের কর্মানুসারে তিনি ভালো বা মন্দ ফল প্রদান করে থাকেন। যদি কোনও ব্যক্তি অজ্ঞানতাবশত পাপ করে তাহলে শনিদেব ক্ষমা করে পাপকারীর অজ্ঞাতেই তাকে সুকর্মের প্রতি পরিচালিত করেন।

ভগবান শনিদেবের নাম দশটি – শনি, ছায়ানন্দন, পিঙ্গল, বভ্রু, রৌদ্র, সৌরী, মন্দ, কৃষ্ণা (কৃষ্ণবর্ণের কারণে হয়তো) দুঃখভঞ্জন, কৌনস্থ্য। শনিদেবের গুরু কৈলাসপতি শিবশঙ্কর আর বৃন্দাবনবিহারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। শনিদেবের একমাত্র আরাধ্য দেব মহাযোগী হনুমানজি।

লোহার রথে চড়েন শনিদেব। সেই রথে থাকে জোড়া শকুন। তাঁর প্রিয় সাতটি বাহনের মধ্যে আছে শকুন, হাতি, ঘোড়া, গাধা, হরিণ, কুকুর ও বাঘ। শনিদেব অত্যন্ত ভালোবাসেন সরষের তেল, গুড়, কালো তিল, কালো কলাই ডাল, যে কোনও কালো দ্রব্য ও কালো পাহাড়। নবগ্রহের নয়টি রত্নের মধ্যে তাঁর অতি প্রিয় রত্ন নীলা। প্রিয় ধাতু লোহা।

শনিদেবের রুচি অধ্যাত্মবাদে, নিয়ম কানুন ও রাজনীতিতে। ন্যায়কর্মই তাঁর কার্যক্ষেত্র। শনিদেবের প্রিয়বন্ধু কালভৈরব, বুধ ও রাহু। তাঁর প্রিয় রাশি মকর ও কুম্ভ। প্রিয় রং কালো।

শনিদেব নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায় উদ্যোগের মধ্যে আছে লৌহ ইস্পাত, পেট্রোলিয়াম পদার্থ, মেশিনারি নির্মাণ ও সারাই, যানবাহন নির্মাণ ও সারাই, সবরকমের পরিবহণ।

মানুষের জীবনে শনিদেবের এক একসময় প্রভাব পড়ে আলাদা। যখন তিনি হাতির পিঠে চড়ে আসেন তখন নারী-পুরুষের লক্ষ্মীপ্রাপ্তি ও অগাধ বিষয়-সম্পত্তি লাভ হয়। জীবন মন ধন্য হয়ে ওঠে।

শনিদেব, ছবি – সৌজন্যে – উইকিপিডিয়া

গাধার পিঠে বসে আসলে এ সময় নারী-পুরুষের সর্বাঙ্গীণ অশুভ সময় সূচিত হয়। সাংসারিক মানসিক আর্থিক শারীরিক ও অন্যান্য সার্বিক দুঃখ ও দুর্ভোগের যেন আর সীমা-পরিসীমা থাকে না। শনিদেব সিংহের পিঠে বসে কোনও মানুষের উপর যখন করুণা করেন, সেইসময় তার সমস্ত কর্মে সিদ্ধিলাভ এবং জাগতিক সর্বাঙ্গীণ প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধি আসে।

মানুষের বুদ্ধিভ্রষ্ট হয় সেইসময়, যখন শনিদেব শকুনের উপর বসে অশুভ প্রভাব ফেলেন। কোনও নারী-পুরুষের অত্যন্ত কষ্টকর মৃত্যুযোগ থাকলে ভগবান সূর্যপুত্র হরিণে চড়ে আসেন। দেহ থেকে প্রাণবায়ু নির্গত হয় সীমাহীন কষ্টভোগের মাধ্যমে।

ছায়ানন্দনের কুকুরের পিঠে চড়ে বাড়িতে আগমন ঘটলে সেই সময় গৃহে নানান রকমের অশান্তি ও ভয়ভীতির সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে হয় চুরি।

পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সোনা রুপো লোহা ও তামা, এই চারটি ধাতুকে শনিদেব চরণ হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন। যেমন – যখন কোনও নারী বা পুরুষের ধনসম্পত্তি ইত্যাদি সমস্ত কিছু নাশ করেন তখন ছায়ার সুপুত্র শনিদেব আসেন লোহার চরণে অর্থাৎ ওই চরণে অশুভ প্রভাব ফেলেন তিনি। কারও উপর শুভ প্রভাব বিস্তারের সময় তিনি আসেন তামা ও রুপোর চরণে। এই সময় মানুষের জাগতিক সমস্ত শুভ কর্মে সুখ ও সাফল্য আসে। যখন সূর্যতনয় শনিদেব নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কারও উপর অপার করুণা করেন তখন তিনি আসেন সোনার চরণে। এই সময় মানুষের ধনে-জনে লক্ষ্মীলাভ, সম্মান যশ অর্থ খ্যাতি ও প্রতিপত্তিলাভ হয়ে থাকে। সুখ ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি হয় যেন দিনে দিনে।

Share
Published by
Sibsankar Bharati

Recent Posts