অমৃতসরের একটি মন্দিরে শনিদেব, নিজস্ব চিত্র
ইদানিং বেশ কয়েক বছর ধরে বাচ্চা থেকে বুড়োদের মুখে ব্যাপক প্রচলিত একটি কথা শনির সাড়ে সাত। রাশিচক্রের দ্বাদশ ঘরের এক একটিতে পরিক্রমাকালীন আড়াই বছর অবস্থান করেন শনি। জাতক বা জাতিকাদের জন্মরাশির দ্বাদশে আড়াই বছর, রাশির উপর আড়াই এবং রাশির দ্বিতীয়ে আড়াই বছর, মোট এই সাড়ে সাত বছর শনির অবস্থানকালকে জ্যোতিষশাস্ত্রে শনির সাড়ে সাত বলে।
বর্তমানে একশ্রেণির জ্যোতিষী তান্ত্রিক ‘সাড়েসাতি’ শব্দটিকে সাধারণ মানুষের কাছে ভীতিপ্রদ করে তুলেছেন। যেমন সাড়েসাতি চলাকালীন আত্মীয় বিয়োগ ও বিচ্ছেদ, কর্মজীবনে জটিলতা সৃষ্টি অথবা কর্মহানি, ব্যবসায় ক্ষতি, অর্থনষ্ট থেকে শুরু করে সংসদের বাংলা অভিধানের সমস্ত অকথা কুকথা তুলে ধরেন জ্যোতিষ বিচারপ্রার্থীর সামনে।
ভগবান শনিদেব বাহ্যত তখন বিচারপ্রার্থীর কাছে ভয়ংকররূপী ভিলেনে পর্যবসিত হন। সাড়েসাতি দোষ খণ্ডন নামক মিথ্যাচারে সহজে অর্থোপার্জনের পথ মসৃণ হয়।
সাড়েসাতি চলাকালীন সাড়ে সাত বছরের মধ্যে মাত্র একবছর সময়টা সার্বিক কাটে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে যখন শনিদেব জাতক বা জাতিকার জন্ম নক্ষত্রে অবস্থান করেন। বাকি বছরগুলি কাটে সাধারণ নিয়মে। ত্রিশ বছর রাশিচক্র পরিক্রমাকালীন সাড়ে সাত বছর বাদ দিয়ে সাড়ে বাইশ বছরের মধ্যে কি কারও আত্মীয় বিয়োগ হয় না? কারও কর্মহানি বা কর্মজীবনে ঝঞ্ঝাট অথবা ব্যবসায় উত্থান পতন হয় না? দেহ কি সাড়ে বাইশ বছরে এতটুকুও রোগাক্রান্ত হয় না? কোনও সমস্যা কাউকে কি কখনও গ্রাস করে না? সবকিছুই কি ওই শনির সাড়ে সাত বছরের প্রকল্প সাড়েসাতিতেই হয়ে থাকে?
সুতরাং জ্যোতিষীদের ভয় ও বিভ্রান্তিমূলক কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেলেই শনিদেবের করুণা আপনিই বর্ষিত হবে।
আজন্ম দুঃখী মরমিয়া সাধক ভগবান শনিদেব। গায়ের রং ঘনঘোর কৃষ্ণবর্ণ টিকালো নাক। ফালাফালা চোখ। শীর্ণকায় তপোক্লিষ্ট দেহ। আজানুলম্বিত বাহু। বাহন শকুন। নবগ্রহের অন্যতম। বাল্যে মাতৃবিয়োগ আত্মহত্যায়। বিবাহ্যেত্তর জীবনে অপরূপা পত্নী মালিনীর অকালমৃত্যু, মহাদুঃখ শোকের নির্যাস প্রতীক মহাযোগী ভগবান শনিদেব। আজ আশ্রমকুঞ্জে একাকী নিঃসঙ্গ জীবন এই মহাসাধকের।