Mythology

কোন সময় ঈশ্বর দর্শনে আশা পূরণ হয়

দেবদেবীরা বিগ্রহে নিজমূর্তি প্রকাশ করেন দুবার। অন্তরে কোনও বাসনা থাকলে সেই বাসনা নিবেদন করলে আর্তির ভাগ্য বিরূপ না হলে ভগবান তার বাসনাপূরণে কার্পণ্য করেন না।

১৯৭০ সাল থেকেই লেখক ও পরিব্রাজক শিবশংকর ভারতীর ভ্রমণ ও সাধুসঙ্গের জীবন শুরু, যা আজও জারি আছে। আসমুদ্র হিমাচলের প্রায় সব জায়গায় ঘুরেছেন। প্রায় পাঁচ হাজার পথচলতি (রমতা সাধু) বিভিন্ন বয়স ও সম্প্রদায়ের সাধুসন্ন্যাসীদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।

সাধুসন্ন্যাসীরা কেন ঘর ছেড়েছেন, কিসের আশায়, কিভাবে চলছে তাঁদের, কেমন করে কাটে জীবন, এমন অসংখ্য কৌতূহলী প্রশ্নই লেখককে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে ভারতের অসংখ্য তীর্থে, পথে প্রান্তরে। এসব প্রশ্নের উত্তরই আছে এ লেখায়। একইসঙ্গে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের দেখা ‘ঈশ্বর’ সম্পর্কে অনুভূত ও উপলব্ধ মতামত।

তাঁদের জ্ঞানের পরিধির বিশালতা উপলব্ধি করে বারবার মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। ‌যাঁকে প্রথমে নিতান্তই ভিখারি ভেবেছেন, পরে কথা বলে পেয়েছেন অগাধ জ্ঞানের পরিচয়। অশিক্ষিত অক্ষরজ্ঞানহীন সাধুদের এমন সব তত্ত্ব ও তথ্যপূর্ণ কথা, যা অনেক পণ্ডিতমনাদের ধারণায় আসবে না। তাঁদের কাছে পর্যায়ক্রমে কথোপকথন, বিভিন্ন তত্ত্বের বিশ্লেষণ, যা অধ্যাত্ম্যজীবন, ভারতীয় দর্শন ও জীবনধারার পরিবাহক।

এ লেখায় কোনও মঠ, মন্দির, আশ্রমের সাধুসন্ন্যাসীদের কথা লেখা হয়নি। কারণ অধিকাংশই তাঁরা গৃহীজীবনের সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে জড়িত। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের উপর নির্ভরশীল। এখানে সেইসব পথচলতি সাধুদের কথা আছে, ‌যাঁদের জীবন জীবিকা চিন্তাভাবনা ইত্যাদি সাধারণ মানুষের কাছে সম্পূর্ণই অজ্ঞাত। ‌যাঁরা সংসারের গণ্ডী ভেঙে বেরিয়েছেন এক অজানা অনিশ্চিত জীবনের উদ্দেশ্যে। ‌যাঁদের কৌতূহলী অন্বেষণ নেই। চাওয়া পাওয়ার বাসনায় ‌যাঁরা নির্বিকার অথচ আত্মতৃপ্ত। এ লেখায় তাঁদের কথাই লিখেছেন পরিব্রাজক শিবশংকর ভারতী।

তখন ছিল মধ্যপ্রদেশে, এখন ছত্তিসগড়। চিত্রকূট থেকে দণ্ডকারণ্য হয়ে নাসিকের পঞ্চবটীতে যাওয়ার পথে সীতা ও লক্ষ্মণকে নিয়ে কয়েকদিনের জন্যে শ্রীরামচন্দ্র যেখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন, সেই স্থানটি এখন ‘সীয়াদেবী’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করলেও শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষই স্থানটির কোনও খবর রাখেন না। আমার যাত্রা সেখানে। আগের থেকে সমস্ত ব্যবস্থা করে রাখা ছিল। মুম্বই মেলে এসে নামলাম দুর্গ স্টেশনে। স্টেশনে নেমে উঠে বসলাম সুমোয়।

গাড়ি প্রথমে পেরল দুর্গ স্টেশন এলাকার জনবহুল অঞ্চল। তারপর ধরল শহরতলির পথ। দু পাশে কখনও ক্ষেতখামার কখনও কিছু জনবসতি, কখনও ধু ধু করছে ফাঁকা মাঠ। যেমনটা ভ্রমণপথে হয় আর কি! পাহাড় হলে কখনও চড়াই, কখনও উতরাই, কখনও ঝরনা, বহু দূরে পাহাড়ি গাছের আড়ালে আবডালে পাহাড়িয়াদের শান্তিনীড়।

কোথাও কোনও থামাথামির বালাই নেই। দুর্গ থেকে একটানা এলাম ৭৮ কিমি। এবার আমাদের গাড়ি বাঁক নিল ডানদিকে। এ পথ সোজা গেছে দিল্লি-রাজহারা। এখন বালোদ রোড। বাঁদিকের পথ সোজা চলে গেল ধমতরি হয়ে বস্তার তথা দণ্ডকারণ্যে। আর একটা রাস্তা দণ্ডকারণ্যের, যেটা রামপুর থেকে ধমতরি হয়ে বস্তার। যে পথে আগে গিয়েছি। দুর্গ থেকে সরাসরি এ রাস্তা পরে মিলিত হয়েছে রামপুর থেকে সোজা আসা ধমতরি রাস্তার সঙ্গে। এ পথ সোজাসুজি চলে গিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে বিজয়নগরম।

ধমতরি রাস্তা ছেড়ে সুমো ধরল বালোদ রোড। এখন দুপাশেই শুরু হল ঘন গভীর জঙ্গল। শাল, শিমূল ছাড়াও নানান বনজ গাছেরা সাজিয়ে রেখেছে সবুজের পসরা। ডাইনে বাঁয়ে সবুজ ফেলে মাঝে পিচের রাস্তা ধরে বেশ গতিতেই এগিয়ে চলে সুমো। লোকবসতি প্রায় চোখেই পড়ে না। তবে এক-আধ ঘর আদিবাসীদের বসত নজরে আসে নানান অজানা গাছের ফাঁকে ফাঁকে।

বালোদ রোড ধরে একটানা এলাম ১৭ কিমি। এবার গাড়ি বাঁক নিল বাঁদিকে। ধরল বীরভূমের লালমাটির মতো কাঁচা রাস্তা। কখনও সমতল, কখনও ঢেউ খেলানো। এ পথে একটা প্রাণিও চোখে পড়ে না। শান্ত স্নিগ্ধ নির্জন মনোহর পরিবেশ। বিচিত্র পাখির কলকাকলিতে মুখরিত বনভূমি। এই নির্জনতা রোমাঞ্চিত করে তোলে দেহমনকে।

কাঁচামাটির রাস্তা ধরে ৪ কিমি পর গাড়ি থামল। এলাম নারাগাঁও। চারদিকে ঘন অরণ্য জুড়ে গাছের পাতার রঙের বর্ণালী মোহময় করে তোলে মনকে। পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ানোর এ যেন এক স্বর্গরাজ্য।

সঙ্গীদের নিয়ে নেমে এলাম গাড়ি থেকে। সামান্য একটু খাড়াই পথ ধরে এগিয়ে চলি। স্থায়ী কোনও দোকানপাট নেই এখানে। পথের দুধারে গাছের ডাল পুঁতে প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া খানতিনেক চা-বিস্কুটের দোকান। একটা তোরণ পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম বিস্তৃত প্রাঙ্গণে।

নারাগাঁও-এ জায়গাটির নাম ‘সীয়াদেবী’। বাংলায় ‘সীতাদেবী’। এ যাত্রায় আজকে যাত্রী বলতে এখনও পর্যন্ত আমরা জনাকয়েক ছাড়া আর কেউ নেই।

Siya Devi
অরণ্যে ঘেরা সীয়াদেবী

কামাতুর পুরুষেরা ভালোবাসে সুন্দরী রমণী, মাছ ভালোবাসে জল, লোভীরা ভালোবাসে ধন ও অর্থ, মায়েরা ভালোবাসে সন্তান, সাধুরা যেমন ভালোবাসে রঘুনাথ, তেমনই আমি ভালোবাসি সাধুসন্ন্যাসী। তাই যখন যেখানে যাই সেখানে আমার চোখদুটো খুঁজতে থাকে সাধুদের। সীয়াদেবীতে গভীর জঙ্গল আছে, তবে কোনও সাধুসন্ন্যাসী চোখে পড়ছে না। স্থানীয় কেয়ারটেকারকে সাধুর সন্ধান জানতে চাইলে তিনি জানালেন,

– আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, সেটা খাদের বিপরীতে পাহাড়ি খাদের একটা অংশে। (একটা গুহা দেখিয়ে বললেন) এটা বাল্মীকি গুহা। রামায়ণীযুগে বাল্মীকি মুনিজি বাস করেছিলেন এখানে। ওই গুহায় বহুকাল ধরে বাস করেন এক বৃদ্ধ সাধুবাবা। ওখানে গিয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

Siya Devi
সীয়াদেবীর প্রাচীন মন্দির

মুহুর্ত দেরি না করে চলে গেলাম। বাল্মীকির ছোট্ট একটি বিগ্রহ ও পাথরের চরণচিহ্ন রয়েছে গুহামুখে। গুহা বলতে যা বোঝায় তা নয়। খাবলা করা পাহাড়ের গা। দেখলাম বসে আছেন এক সাধুবাবা। জটা নেই। কাঁধ ছাড়িয়ে মাথার চুল। প্রশস্ত কপাল। পেট পর্যন্ত দাড়ি। মাথার চুল আর দাড়ি বকসাদা। টিকালো নাক। ডাগর ডাগর দেবীচক্ষু। গালটা ভাঙা চোখদুটো বসা। গায়ের রঙ তামাটে। একটা সাদা কাপড়ের দুটো ফালির একটা পরা। কম্বলের আসনে বসে আছেন।

কপালে তিলক, পাশে ঝোলা চিমটে ত্রিশূল এসব কোনওটাই চোখে পড়ল না। এসবগুলো হয়তো তাঁর কুঠিয়াতে আছে, তবে এখানে নেই। বয়েস আন্দাজ ৮৫/৯০-এর কাছাকাছি হবে বলে মনে হল। দেখলাম, আমার নাম না জানা ও না দেখা এক ধরনের দারুণ সুন্দর রঙের বাহারি ফুল দিয়ে তিনি মালা গাঁথছেন। সামনাসামনি হয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। মুখের দিকে তাকালেন। মালা গাঁথা বন্ধ রেখে হাতজোড় করে নমস্কার জানালেন। পরে মুখে বললেন,

– বেটা তু কঁহা সে আয়া?

নিজেই একপাশে প্রায় মুখোমুখি হয়ে কোথায় থাকি, কি জন্যে এখানে এসেছি ইত্যাদি সব জানিয়ে বললাম,

– বাবা, আপনার বয়স কত? জনশূন্য এই অরণ্যে বাস করছেন কতদিন ধরে? কোন সম্প্রদায়ের সাধু আপনি?

প্রসন্ন হাসিমাখা মুখমণ্ডল। একটা একটা করে বনফুল মালায় গাঁথতে গাঁথতে বললেন,

– এখন আমার বয়েস ‘নব্বই হো চুকা হ্যায়’। ‘রঘুনাথ’ আমার উপাস্য দেবতা। চিত্রকূট থেকে নাসিক পঞ্চবটী যাওয়ার পথে শ্রীরামচন্দ্র, মা জানকী আর ভ্রাতা লক্ষ্মণ কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়েছিলেন এখানে। তাই স্থানের নাম সীয়াদেবী। তাঁদের পদধূলিতে পবিত্র বলে এই অরণ্যে পড়ে আছি পঞ্চাশ বছর ধরে। হালে কয়েক বছর হল জায়গাটা সরকারের নজরে পড়ায় এখন দুচারজন এখানে আসে বেড়াতে। আগে আমার তপস্যাজীবন কেটেছে বনের পশুপাখিদের নিয়ে। বেটা অনেক বয়েস হয়ে গেল। এখান থেকে আর কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা নেই। আমি বেটা শ্রী সম্প্রদায়ের সাধু।

কথার সূত্র ধরে সাধুবাবাকে বললাম,

– বাবা, এখন না হয় লোক সমাগম বেড়েছে। আজ থেকে ৪০/৫০ বছর আগে এই গভীর জঙ্গলে তো কেউ আসতই না। আহার জুটত কোথা থেকে?

সাধুবাবা হাসিমাখা প্রসন্নমুখে জানালেন,

– এখান থেকে বহুদূরে দু-একটা গাঁয়ে আদিবাসীদের শান্তিকুঁড়ে আছে। ওরা বড়ই গরিব। তবু আমার এখানে অবস্থান কারণ ওদের যা জুটত তার থেকে আমাকে কিছু দিয়ে দিত। তাতেই প্রাণরক্ষা হয়েছে আমার। যেদিন কিছু জুটত না সেদিন বন থেকে হরতুকি এনে চিবিয়ে ঝরনার জল খেয়ে আমার দিন কেটেছে। দুঃখী আদিবাসীরা আমার কেউই নয়, তবুও কোনও কর্মফলে আমার সঙ্গে প্রণয়ে আবদ্ধ হয়েছিল তারা। বেটা, প্রণয় কি ও কাকে বলে জানিস? একের সুখ কিংবা দুঃখে অপরের সহানুভূতি প্রকাশকেই প্রণয় বলে।

সাধুবাবাকে বললাম,

– বাবা, এই শাল, সেগুন, আমলকি, হরতকি ছাড়া নানান গাছে ভরা গভীর ঘন জঙ্গলে তো একটা সময় দিনের পর দিন আর অগুন্তি রাত কেটে গিয়েছে। তখন কোনও ভয় কিংবা অলৌকিক ঘটনা কি ঘটেছে আপনার জীবনে?

বেশ জোরের সঙ্গে উদ্দীপ্ত কণ্ঠে তিনি বললেন,

– না বেটা, তেমন কোনও ঘটনা আমার জীবনে ঘটেনি আর ভয়টা আমার কোনওকালেই ছিল না। আজও নেই। এছাড়া এখানে বাঘ ভাল্লুকের তেমন কোনও উপদ্রব আমার চোখে পড়েনি।

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হতে হতে একসময় বললাম,

– বাবা, সারা ভারতে বিভিন্ন মঠমন্দির, মিশন আশ্রমে বিভিন্ন দেবদেবীদের নিয়মিত আরতি করা হয়। এটা কেন করা হয় আর এর মাহাত্ম্যটাই বা কি, দয়া করে বলবেন বাবা!

Siya Devi

সাধুবাবা এতক্ষণ বাবু হয়ে বসে মালা গাঁথছিলেন। এর মধ্যে অনেকগুলি মালা তৈরি করে ফেলেছেন। শেষ মালাটায় শেষ গিঁটটা দিয়ে পাশে রাখলেন। এবার পা একটু ছড়িয়ে বসে বললেন,

– বেটা অনুরাগ তথা প্রেমের সঙ্গে প্রদীপ ইত্যাদি দিয়ে দেবদেবী বরণ করাকেই আরতি বলে। দেবদেবীরা বিগ্রহে নিজমূর্তি প্রকাশ করেন দুবার। যখন আরতি হয় তখন, আর যখন কোনও ভক্ত আকুল আর্তি নিয়ে দর্শন করে বা করতে আসে তখন শ্রীভগবান নিজমূর্তিতে প্রকটিত হন বিগ্রহে আর্তির আশা পূরণের উদ্দেশ্যে। অন্তরে কোনও বাসনা থাকলে আরতিকালীন সেই বাসনা নিবেদন করলে আর্তির ভাগ্য বিরূপ না হলে ভগবান তার বাসনাপূরণে কার্পণ্য করেন না। সেইজন্যেই তো আরতি ও আরতি দর্শনের মাহাত্ম্য সীমাহীন।

সাধুবাবার এ কথায় মন আমার আনন্দে উথলে উঠল। সাধুমুখে একথা আগে কোথাও শুনিনি। বৃদ্ধ বললেন,

– বেটা, অন্তরে কোনও কামনা বাসনা থাকলে, ভগবানের কাছে কিছু চাইবার থাকলে, কোনও আশা অপূরিত থাকলে তা পূরণের জন্য তাঁকে জানানোর সর্বোৎকৃষ্ট সময়টা হল আরতির সময়। তবে একটা কথা আছে, এমন কিছু চাইবি না, যা তোর পাওয়ার পক্ষে নয়। সংসারী হয়ে নিজের ও সংসারের পক্ষে উপযুক্ত যা কিছু চাইবি তা পেয়ে যাবি নির্বিবাদে।

কথাপ্রসঙ্গে আরও নানান কথা হতে হতে একসময়ে এলাম গুরুপ্রসঙ্গে। সাধুবাবাকে বললাম,

– বাবা, কিরকম গুরুর কাছ থেকে দীক্ষাগ্রহণ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

কথাটা শুনে একগাল হেসে ফেললেন। হাসির রহস্যটা বুঝলাম। এই মুহুর্তে আমি ছাড়া সাধুবাবার আশেপাশে আর কেউ নেই। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজা জিজ্ঞাসা করে বসলেন,

– তোর কি দীক্ষা হয়েছে?

মাথাটা নেড়েও মুখে বললাম,

– হ্যাঁ, বাবা আমি দীক্ষিত। আমার জীবনে দীক্ষালাভ হয়েছে এক কুমারী সন্ন্যাসিনী মায়ের কাছ থেকে।

– বাঃ, বেটা বাঃ, বহুত বেঁচে গেছিস। কুচিকিৎসক আর গৃহী গুরুতে কোনও তফাৎ নেই। এরা সব একগোত্রের। কুচিকিৎসকের জন্য পরম শান্তি ও সুখনিদ্রায় থাকেন যমরাজ। এরা হলেন যমের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। যমরাজ শুধুমাত্র প্রাণহরণ করে মানুষের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন। এর থেকে আর বেশি কিছুই করেন না। কিন্তু মানুষের প্রাণ ও অর্থ দুটোই ইচ্ছামতো হরণ করে কুচিকিৎসক। সেই জন্য বললাম, চিকিৎসক হলেও এরা যমের চেয়েও বড়। ঠিক সেইরকম গৃহীগুরু। এদের কাছ খেকে দীক্ষা নিলে ইহকালের কল্যাণ তো কিছু হবে না, পরকালের পারমার্থিক উন্নতির পথটাও যাবে রুদ্ধ হয়ে।

Siya Devi
সীয়াদেবীতে রামসীতার মূর্তি

একটা কথা মনে রাখিস বেটা, গৃহীশিষ্যের যদি সংসারী গুরু হয় তাহলে তার কোনও কল্যাণই আর হয় না। কাদা দিয়ে কেউ যদি কাদা ধোয়, তার দাগ কি কেউ তুলতে পারে, না তোলা যায়? স্বামী সন্তদাস, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ, যোগীরাজ শ্যামাচরণ, আনন্দময়ী মা, ঠাকুর ওঙ্কারনাথ, এদের মতো এমন গৃহী এদেশে কজনা আছে যারা মহাপুরুষ হয়েছে?

একটু থেমে সাধুবাবা বললেন,

– বেটা গুরু হলেন কুম্ভকার। নির্দোষ কুম্ভসম শিষ্য একমাত্র তিনিই নির্মাণ করেন। তাঁর এক হাত কুম্ভের ভিতরে (অন্তরে) আর এক হাতে বাইরে আঘাত করে দেখে তিনিই একমাত্র বোঝেন ‘কুম্ভ ঠিক হ্যায় কি নেহি।’

Show More